অর্থনৈতিক মন্দার কবলে সারাবিশ্বের মত ধরাশায়ী পিরামিডের দেশ মিশর। দেশটির মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ‘মুরগির পা’ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যা সাধারণত মিশরে কুকুর-বিড়ালের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, আফ্রিকার দেশ মিশর গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে জনগণ তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য রীতিমতো লড়াই করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মিশরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নিউট্রিশনের পক্ষ থেকে পুষ্টির জন্য ‘মুরগির পা’ রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এই সুপারিশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশটিতে।

মিশরের গিজা মার্কেটে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রেতার পাশে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে দয়া ভিক্ষা চেয়ে বলছেন, ঈশ্বর আমাদের মুরগির পা খাওয়ার মত অবস্থায় নিয়ে ফেলো না।
তিন সন্তানের মা ওয়েদাদ বলেন, আমি মাসে একবার মাংস খাই। সপ্তাহে একবার মুরগি কিনি। এক বছর আগে, ওয়েদাদ তার মাসিক পেনশন দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু এখন অন্যান্য অনেক মিশরীয়দের মতো তিনি কষ্ট করে দিন অতিবাহিত করছে। এখন তো একটি ডিমের দামও ৫ মিশরীয় পাউন্ড (০.১৬ মার্কিন ডলার) হয়ে গেছে। তিনি কল্পনা করছেন শীঘ্রই মুরগিও কেনার সামর্থ্য থাকবে না তার।
২০২১ সালে যে মুরগির দাম ছিল ৩০ মিশরীয় পাউন্ড (১১৭ টাকা), চলতি সপ্তাহে সেই মুরগি কিনতে হয়েছে ৭০ মিশরীয় পাউন্ডে (২৫১ টাকা)। গত এক বছরে মিশরীয় পাউন্ড মার্কিন ডলারের তুলনায় অর্ধেক মূল্য হারিয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি তার দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ২০১১ সালের মিশরীয় অভ্যুত্থান এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করেন।
গত বছরের মার্চে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অর্থনীতিতে মারাত্মক ধাক্কা দেয়। মিশর হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম আমদানিকারক, এবং দুটি দেশ ছিল এর প্রধান সরবরাহকারী। যুদ্ধ যখন রপ্তানি ব্যাহত করে, তখন গমের দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া পর্যটন, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৫ শতাংশ, তাও ইতিমধ্যে মহামারীর কারণে কঠোরভাবে ব্যহত হয়েছে।
মিশরের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ২০১৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে দেখায় ৬০ শতাংশেরও বেশি লোক হয় দরিদ্র না হয় দ্রারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে।