চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

হেরেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকল বাংলাদেশ

ওয়ানডে ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র একবারই হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে কার্ডিফে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারায় লাল-সবুজের দল। ১৮ বছর পর অজিদের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরেছে টিম টাইগার্স। বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে অজি বোলারদের সামলে তিনশতাধিক রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বল হাতে আলো ছড়াতে পারেননি মোস্তাফিজ-তাসকিনরা। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হারলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকল টাইগার বাহিনী। 

পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে প্যাট কামিন্সের দলের বোলারদের সামলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৬ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। জবাবে নেমে মিচেল মার্শের দেড়শতাধিক রানের ইনিংসে ৪৪.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে অস্ট্রেলিয়া।

শান্তদের হারিয়ে নয় ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় দল হিসেবে গ্রুপপর্ব শেষ করলো অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে বিশ্বকাপে আলো ছড়াতে না পারা বাংলাদেশ সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আসর শেষ করেছে। যদিও টুর্নামেন্ট থেকে এখনও কিছু পাওয়ার আছে লিটন-শান্তদের। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আটে থেকে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করার লাল-সবুজ বাহিনীর ভালো সুযোগ আছে।

বাংলাদেশের মূল লড়াইটা ছিল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। সমীকরণের সেই লড়াইয়ে লঙ্কানরা আর কোনোভাবেই টিম টাইগার্সকে পেছনে ফেলতে পারবে না। শ্রীলঙ্কার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সকল সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

নয় ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ২ জয়ে পেয়েছে ৪ পয়েন্ট। সমান ম্যাচ খেলে লঙ্কানদের পয়েন্টও ৪। কিন্তু নেট রানরেটের হিসেবে টেবিলে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। রানরেট বাংলাদেশের -১.০৮৭, শ্রীলঙ্কার -১.৪১৯।

টাইগারদের দেয়া ৩০৭ রানের জয়ের লক্ষ্য অজিরা যদি ২২.৪ ওভারের ভেতর তাড়া করতে পারতো, তাহলে রানরেটে শ্রীলঙ্কার পেছনে পড়তো বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া তা না পারার কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা সাকিবদের ভালোভাবেই রয়েছে।

রোববার বেঙ্গালুরুতে লিগপর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলবে নেদারল্যান্ডস। আসরের একমাত্র অপরাজিত দল টিম ইন্ডিয়াকে হারানোর মতো বড় অঘটন ঘটাতে পারলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ডাচরা টেবিলের সেরা আটের ভেতর চলে আসবে। নেদারল্যান্ডস তখন পাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট। তখন অবশ্য বাদ পড়তে পারে বাংলাদেশ।

৩০৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তৃতীয় ওভারেই দলীয় ১২ রানের মাথায় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেটের পতন হয়। তাসকিন আহমেদের বলে ১০ রান করে বোল্ড হন হেড। এরপর ওয়ার্নার-মার্শ জুটি দ্বিতীয় উইকেটে ১২০ রানের জুটি গড়েন।

হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর সাজঘরে ফেরেন ৫১ বলে ৬ চারে ৫৩ রানের ইনিংস খেলা ওয়ার্নার। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মিড অনে নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দি হন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ১৭৫ রান যোগ করে জয় নিশ্চিত করেন মার্শ-স্মিথ জুটি।

মার্শ ৮৭ বলে এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এটিই তার প্রথম শতক। অপরাজিত থাকেন ১৩২ বলে ১৭টি চার ও নয়টি ছক্কায় ১৭৭ রান করে।  স্টিভেন স্মিথ ৬৪ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

টাইগারদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।

এর আগে ব্যাটে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৬ রান যোগ করে দলের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। জুটি ভেঙে ১২তম ওভারে শন অ্যাবটের বলে সহজ ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তানজিদ। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ৬ চারে ৩৬ রান।

দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন লিটন দাস। দলীয় স্কোর একশো ছাড়ানোর পর সাজঘরে ফেরেন ৪৫ বলে ৫ চারে ৩৬ রান করা লিটন। টাইগারদের উইকেটরক্ষক ব্যাটার অ্যাডাম জাম্পার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লংঅনে মার্নাস লাবুশেনের তালুবন্দি হন।

টাইগারদের দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর রানের চাকা সচল রাখেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। দারুণ ছন্দে থাকা শান্ত নিজের দোষেই হন রান আউট। অ্যাবটের বলে এক রান নিয়েছিলেন। অযথাই দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে করেন সর্বনাশ। স্কয়ার লেগে থাকা মার্নাস লাবুশেনের থ্রোয়ে বল নিয়ে স্টাম্প ভাঙেন জশ ইংলিশ। শান্তর সম্ভাবনাময় ইনিংস ৫৭ বলে ৬ চারে ৪৫ রানে থামে। তৃতীয় উইকেটে টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের সঙ্গে ৬৪ রান যোগ করেন হৃদয়।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন হৃদয়। রানের গতি বাড়িয়ে নিতে থাকা মাহমুদউল্লাহর রান আউটে ভাঙে জুটি। জশ হ্যাজেলউডের বলে কাভারের দিকে খেলেই রান নিতে চান হৃদয়। তার ডাকে সাড়া দিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনেন মাহমুদউল্লাহ। লাবুশেনের দারুণ থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে আউট হয়ে ফিরে যান। শান্তর মতো মাহমুদউল্লাহও ডাইভ দিয়েছিলেন, কিন্তু বাঁচতে পারেননি। ২৮ বলে এক চার ও ৩ ছক্কায় ৩২ রান করে থেমেছেন।

মাহমুদউল্লাহর পর আউট হয়ে ফেরেন মুশফিক। জাম্পার শর্ট লেন্থের উপর করা বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে মিড অনে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দেন। এক ছয়ে ২৪ বলে ২১ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

ফিফটি পাওয়া হৃদয় খেলেন ৭৯ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭৪ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলে বিদায় নেন। মার্কাস স্টইনিসের বলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে লাবুশেনের তালুবন্দি হন।

অ্যাবটের করা শেষ ওভারে কামিন্সের হাতে ধরা পড়ে ড্রেসিং রুমে যান ২০ বলে ৪টি চারে ২৯ রান করা মিরাজ। ৭ রান করে রান আউট হন নাসুম আহমেদ। দুই রানে অপরাজিত থাকেন শেখ মেহেদী হাসান।

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৩২ রান খরচায় ২ উইকেট পান জাম্পা। দুই উইকেট পেলেও খরুচে ছিলেন অ্যাবট, দেন ৬১ রান। একটি উইকেট নেন স্টয়নিস।

বিজ্ঞাপন

Nil Joler Kabbo
Bellow Post-Green View