জয়ের জন্য ৩১৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভালোই এগোচ্ছিল পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আঘা সালমানের ব্যাটে দেখছিল জয়ের সম্ভাবনা। শেষ বিকেলে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দেখা মেলে প্যাট কামিন্সের বোলিং তাণ্ডব। সফরকারীরা ১৮ রান যোগ করতে শেষ ৫ উইকেট হারায়। ৭৯ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ ঘরে রেখে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ৩১৮ রানের জবাবে ২৬৪ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। চতুর্থ দিনে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান ২৩৭ রানে থামে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা ক্যাঙ্গারুদের অধিনায়ক কামিন্স।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ২০২৩-২৫ চক্রের টেবিলে এসেছে পরিবর্তন। ৭ ম্যাচে ৪ জয়, এক ড্র ও ২ হারে ৫০ শতাংশ গড় পয়েন্ট নিয়ে চারধাপ উপরে উঠে দ্বিতীয় স্থানে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। দুইয়ের পাকিস্তান হেরে তিন ধাপ নিচে নেমে পঞ্চম স্থানে এসেছে। চার ম্যাচে ২ জয় ও ২ হারে তাদের গড় পয়েন্ট ৪৫.৮৩ শতাংশ।
এক ম্যাচ খেলে জয় পাওয়া সাউথ আফ্রিকা ১০০ শতাংশ গড় পয়েন্টে টেবিলের শীর্ষ দখলে নিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ড ৫০ শতাংশ গড় পয়েন্ট পেয়েছে। অজিরাও ৫০ শতাংশ গড় পয়েন্ট পেয়েছে, তবে ম্যাচসংখ্যা বেশি হওয়ায় টেবিলের দুইয়ে। সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে হেরে টেবিলে শীর্ষ থেকে টিম ইন্ডিয়া পাঁচে নেমে গিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া জিতে তিন খেলায় এক জয়, এক ড্র ও এক হারে ৩৮.৮৯ শতাংশ গড় পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ঠেলে দিয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে।
সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আটে থাকা ইংল্যান্ডের গড় পয়েন্ট যথাক্রমে ১৬.৬৭ ও ১৫ শতাংশ। দুই ম্যাচের সবকটিতে পরাজিত হওয়ায় পয়েন্টের দেখা পায়নি টেবিলের তলানির শ্রীলঙ্কা।
শুক্রবার অজিরা ৬ উইকেটে ১৮৭ রানে দিন শুরু করে। দুইশ পেরোনোর পর বাবর আজমের তালুবন্দি হন ৯ রানে থাকা মিচেল স্টার্ক। উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের গ্লাভসে ধরা পড়েন কামিন্স, ১৬ রান করে।
নাথান লায়ন ১১ রানে আমের জামালের বলে বোল্ড হন। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ফিফটির দেখা পান অ্যালেক্স ক্যারি। বাঁহাতি উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মীর হামজার বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়েন, তার আগে ১০১ বলে ৮ চারে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন।
পাকিস্তানের পক্ষে হামজা ৩২ রানে পান ৪ উইকেট। শাহিন শাহ আফ্রিদিও নেন ৪ উইকেট, খরচ করেন ৭৮ রান। ২ উইকেট নেন আমের জামাল।
তিন শতাধিক রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে শুরুতে আবদুল্লাহ শফিকের উইকেট হারায় পাকিস্তান। ৪ রানে এ ওপেনার উসমান খাজার হাতে ধরা পড়েন। ইমাম-উল-হক ১৬ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে এলবিডব্লিউ হন।
বাবর আজমকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৫৯ রান যোগ করেন অধিনায়ক শান মাসুদ। ফিফটির পর ৭১ বলে ৭ চারে ৬০ রানে কামিন্সের বলে দ্বিতীয় স্লিপে স্মিথের তালুবন্দি হন। ৪১ রান করা বাবরকে বোল্ড করেন জশ হ্যাজেলউড। সৌদ শাকিল ২৪ রানে ক্যারির গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরলে সফরকারীদের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৬২ রান।
রিজওয়ান ও সালমান ষষ্ঠ উইকেটে ৫৭ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন। পাকিস্তানের জয়ের আশা জাগার সময় নামে আকস্মিক ব্যাটিং ধস। কামিন্সের বলে ক্যারির কাছে ক্যাচ দিয়ে ৩৫ রানে ক্রিজ ছাড়েন রিজওয়ান। ব্যাট বা গ্লাভসে বল না লাগায় ফিল্ড আম্পায়ার তাকে আউট দেননি। অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নিলে তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ আউট দেন।
বল রিজওয়ানের রিস্টব্যান্ডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্নিকোতে স্পাইক ধরা পড়ায় পাকিস্তান ব্যাটারকে আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ। এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট রিজওয়ান ফিল্ড আম্পায়ার জোয়েল উইলসনের সঙ্গে কথাও বলেন।
আইসিসির সাবেক এলিট আম্পায়ার সাইমন টফেল চ্যানেল সেভেনকে বিতর্কিত আউট নিয়ে পরে বলেছেন, আমার মতে বল তার গ্লাভসের সঙ্গে সংযুক্ত রিস্টব্যান্ডের উপরে ছিল। আমি যেখানে বসে আছি, তার চেয়ে রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ ভালো অবস্থানে আছেন। তার কাছে সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ ছিল।
রিজওয়ানের সাজঘরে ফেরা দিয়ে ব্যাটিং ধসের শুরু হয়। দুই বল পর কামিন্সকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আমের জামাল। শাহিন শাহ আফ্রিদি রানের খাতা না খুলে মার্নাস লাবুশেনের ক্যাচ হন। প্রথম ইনিংসের পর আবারও ৫ উইকেটের দেখা পান কামিন্স। পরপর দুই বলে ৭০ বলে ৬ চারে ৫০ রান করা সালমান ও মীর হামজার উইকেট তুলে নেন মিচেল স্টার্ক, সিরিজ জয় উদযাপন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচসেরা কামিন্স ৪৯ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট, প্রথম ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। স্টার্ক ঝুলিতে ভরেন ৪ উইকেট।
নতুন বছরে ৩ জানুয়ারি সিডনিতে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টটি। ম্যাচটি খেলে সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন ডেভিড ওয়ার্নার।