আসামে বাল্যবিবাহ রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। শনিবার পর্যন্ত বাল্য বিবাহের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে অভিযুক্ত অন্তত ৮ হাজার। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পুলিশ স্বেচ্ছাচারিতা করছে।
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা দেওয়ার পর সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে আসামে। পুরোহিত এবং কাজীসহ বাল্যবিবাহের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যে ২২৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী পুরুষ।
গত ২৩ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় ঘোষণার পর পুলিশ পনেরো দিনেরও কম সময়ে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত ৪ হাজার ৭৪টি কেস রেজিস্ট্রি করেছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে অন্তত ৮ হাজার মানুষকে৷ যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ রোধ আইনে মামলা হয়েছে। কিন্তু যেসব ঘটনায় বিয়ে হওয়া কিশোরীর বয়স ১৪-এর কম, সেইসব ক্ষেত্রে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনরোধ আইনেও মামলা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের পরিবার বলছে, পুলিশ স্বেচ্ছাচারিতা করছে। মধ্যরাতেও পুলিশ দরজায় এসে ধাক্কা দিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করছে। এটি যেকোন পরিবারের জন্য ভীতিকর।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বহু নারী। এদের প্রত্যেকের স্বামীকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অধিকাংশ পরিবারেই হয়তো উপার্জন করেন শুধু একজন আর তাকেই জেলে নিয়ে যাওয়ায় কার্যত ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন সেই সব নারীরা।
এদের মধ্যে অধিকাংশ নারীরই সন্তান আছে নয়ত অন্তঃসত্ত্বা। আন্দোলনকারী নারীরা বলছেন, তারা কী করবেন বা কোথায় যাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাদের সন্তানের ভবিষ্যতই বা কী হবে তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন।
বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি, কিন্তু যে উপায়ে বিজেপি সরকার এই সমস্যার মোকাবিলা করতে চাইছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন আসামের সিপিআই(এম) সম্পাদক সুপ্রকাশ তালুকদার।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে যারা বিয়ে করে ফেলেছে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ায় একটা সামজিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বাড়ির পুরুষরাই যেহেতু রোজগার করেন, এতে পরিবারগুলো সমস্যার মুখে পড়বে।
এছাড়া সন্তান নিয়ে মায়েরা কোথায় যাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি শিশুগুলোর ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তিনি বলেন, সরকার বরং আর কেউ যেন বাল্যবিবাহ না করে বা বাল্যবিবাহ না দেন সেই দিকে জোর দিক। বিবাহিতদের ধরে সমস্যার খুব একটা সমাধান হবে না, উল্টো সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।