৮৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। দলের হাল ধরেছিলেন তাওহিদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। ৭২ রানের জুটি গড়ে ফেরেন মুশফিক। শামীমও ফিরে যান দ্রুত। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তাওহিদ হৃদয়। ৮২ রানের ইনিংস খেলে হৃদয় ফিরে যান সাজঘরে। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ অবধি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১ রানের পরাজায় দেখল টিম টাইগার্স।
এশিয়া কাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটে পাঠায় বাংলাদেশ। বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট তুলে ২৫৭ রানে শ্রীলঙ্কাকে থামায় টিম টাইগার্স। জবাবে নেমে ৪৮.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৬ থামে বাংলাদেশ। সুপার ফোরে টানা দুই পরাজয়ে ফাইনালের পথ থেকে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছিল সাকিব আল হাসানের দল।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৫৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। নাঈম শেখ একটু নড়বড়ে থাকলেও মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছিলেন দুর্দান্ত। ১২তম ওভারের শুরুতে দাসুন শানাকার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। ১১.১ ওভারে দলীয় ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২৯ বলে ২৮ রান করার পথে চারটি বাউন্ডারি আসে মিরাজের ব্যাট থেকে।
১৩.৪ ওভারে ৬০ দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দাসুন শানাকার বাউন্সারে নাঈম শেখ ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষকের হাতে। ৪৬ বলে ২১ রান করে ফেরেন এই ওপেনার।
নাঈম ফেরার পর চারে ব্যাটে আসেন সাকিব আল হাসান। ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনিও। ১৫.৪ ওভারে মাথিশা পাথিরানার বলে আউট সাইড এজ হয়ে ধরা দেন উইকেটরক্ষকের হাতে। আম্পায়ার প্রথমে আউট না দিলেও রিভিউতে সফলতা পায় লঙ্কানরা। ৭০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় টিম টাইগার্স। সাকিব ফেরেন ৭ বলে ৩ রান করে।
১৮.৫ ওভারে দলীয় ৮৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুনিথ ওয়েল্লাগের বলে বিহাইন্ড দ্য উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন কুমার দাস। ২৪ বলে ১৫ রান করেন লিটন।
লিটন ফেরার পর হাল ধরেন মুশফিক ও হৃদয়। ৩৭.২ ওভারে দলীয় ১৫৫ রানে দাসুন শানাকার বলে কাসুন রাজিথার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টাইগার উইকেট রক্ষক ব্যাটার। ৪৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
৪১.৩ ওভারে দলীয় ১৮১ রানে মাহেশ থিকসানার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন শামীম। লঙ্কানদের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি টাইগার ব্যাটারের। ১০ বলে ৫ রান করে ফিরে যান।
এক ওভার পরেই ফের মাহেশ থিকসানা বলে আসেন। ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাওহিদ হৃদয়কে। আম্পায়ারও সাড়া দেন। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। তবে লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশে বল স্পর্শ করায় দলীয় ১৯৭ রানে ফিরতে হয় টাইগার ব্যাটারকে। সাতটি চারের মার ও এক ছক্কায় ৯৭ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন হৃদয়।
তিন বল পরেই তাসকিন আহমেদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ফেরান থিকসানা। ৩ বলে ১ রান করেন তাসকিন।
৪৬.১ ওভারে দলীয় ২১৬ রানে মাথিশা পাথিরানার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন শরীফুল ইসলাম। ৭ বলে ৭ রান করেন শরীফুল। এরপর ৪৮.১ ওভারে নাসুমের উইকেট হারিয়ে ইনিংস থামে টাইগারদের। ১৫ বলে ১৫ রান করে ফেরেন নাসুম। হাসান মাহমুদ অপরাজিত ছিলেন ৭ বলে ১০ রানে।
লঙ্কানদের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন মাহেশ থিকসানা, মাথিশা পাথিরানা ও দাসুন শানাকা। এছাড়া দুনিথ ওয়েল্লাগে নেন একটি উইকেট।
এর আগে স্পিনারদের কিপটে বোলিং আর পেসারদের উইকেট শিকারের মহড়ায় শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ খুব বড় হতে দেয়নি বাংলাদেশ। কলম্বোয় এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের ম্যাচে স্বাগতিকদের ২৫৭ রানে আটকে রাখে সাকিব আল হাসানের দল। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে আড়াইশ পেরোনো সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা।
সামরাবিক্রমা খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। মাত্র ৭২ বলে ৯৩ রান করে ইনিংসের শেষ বলে আউট হন। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার, দুটি ছয়ের মার। আগের ১৯ ওয়ানডেতে উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৮২।
কুশল মেন্ডিস ৫০ ও পাথুম নিশাঙ্কা করেন ৪০ রান। হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। তিন পেসারই গড়ে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ছয়ের ওপর।
প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেটে পেসাররা পেয়েছেন বাড়তি মুভমেন্ট। একটু খরুচে হলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট বের করতে পেরেছেন হাসান-শরিফুল-তাসকিনরা। অন্যদিকে সাকিব-নাসুম-মিরাজ উইকেটহীন ছিলেন। রান দেয়ায় সবচেয়ে কিপটে ছিলেন নাসুম আহমেদ। এ বাঁহাতি স্পিনার ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩১ রান। সাকিব ১০ ওভারে ৪৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩ ওভারে দিয়েছেন ১৪ রান।
ছয় বোলার নিয়ে খেলার সুবিধা ভালোভাবেই আদায় করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিকল্প থাকায় শুরুর ৫ ওভারের মধ্যে বোলিং পরিবর্তন করেন। হাসানকে এনে সাফল্যও পান। প্রথম ব্রেক থ্রু এনে ডানহাতি পেসারই। পরে শরিফুল ইসলাম জোড়া শিকার করে ম্যাচে ফেরান বাংলাদেশকে। পরে জ্বলে ওঠেন তাসকিনও। স্লগ ওভারে উইকেট তুলে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ আরও বড় হতে দেননি।