বল হাতে অ্যাশেজের শেষ দৃশ্যের নায়ক হয়েই ক্রিকেটকে রাজকীয়ভাবেই বিদায় দিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। অস্ট্রেলিয়ার শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে ওভাল টেস্টকে করলেন স্মরণীয়। অজিদের ৪৯ রানে হারিয়ে ২-২ ব্যবধানে সমতা টেনে অ্যাশেজ সিরিজ শেষ করল ইংল্যান্ড।
টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বাধিক ৬০৪ উইকেট শিকার করে নিজের ক্যারিয়ার শেষ করলেন ব্রড। তার উপরে রয়েছেন ৮০০ উইকেট পাওয়া মুত্তিয়া মুরালিধারন, ৭০৮ উইকেট দখল করা শেন ওয়ার্ন,৬৯০ উইকেট শিকারি জেমস অ্যান্ডারসন ও ৬১৯ উইকেট ঝুলিতে ভরা অনিল কুম্বলে।
৩৮৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামা অজিরা সোমবার বিনা উইকেটে ১৩৫ রান নিয়ে টেস্টের পঞ্চম ও শেষদিনের খেলা শুরু করে। দ্রুতই দুই উদ্বোধনী ব্যাটারকে হারি সফরকারীরা চাপে পড়ে।
ক্রিস ওকসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১০৬ বলে ৯ চারে ৬০ রান করা ডেভিড ওয়ার্নার। এরপর ওকসের বলে ১৪৫ বলে ৮ চারে ৭২ রান করা উসমান খাজা লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন।
বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মার্নাস লাবুশেন। ১৩ রান করে মার্ক উডের বলে দ্বিতীয় স্লিপে জ্যাক ক্রাওলের তালুবন্দি হন। চতুর্থ উইকেটে হাল ধরার চেষ্টা করেন স্টিভেন স্মিথ ও ট্রাভিস হেড।
লাঞ্চের ঠিক আগে ঘটে নাটক। মঈন আলীর বলে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে থাকা স্মিথ রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেন। বল তার গ্লাভসে লাগার পর গালিতে থাকা বেন স্টোকস সেটি লাফিয়ে ধরে উইকেট পতনের আনন্দে মাতেন। উদযাপনের সময় বল তার হাত ফসকে যায়। রিভিউ নেন থ্রি লায়নদের অধিনায়ক। টিভি রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ারও নট আউটের সংকেত দেন।
বৃষ্টির কারণে লাঞ্চের পর খেলা শুরু হতে বেশ বিলম্ব হয়। ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর বল আবারো মাঠে গড়ায়। এর মাঝেই শেষ হয় চা বিরতি।
চতুর্থ উইকেটে ৯৫ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন স্মিথ ও হেড। এরপর নামে ব্যাটিং ধস। মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে ক্যাঙ্গারুরা ৪ উইকেট হারায়। ৩ উইকেটে ২৬৪ থেকে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৭৪ রান।
হেড ৪৩ রান করে মঈনের বলে জো রুটের হাতে স্লিপে ক্যাচ দেন। ওকসের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্রাওলের হাতে ধরা পড়েন ৯৪ বলে ৯ চারে ৫৪ রান করা স্মিথ। মঈনের বলে জনি বেয়ারস্টোর গ্লাভসবন্দি হন ৬ রান করা মিচেল মার্শ। তারপর ওকসের শিকারে পরিণত হন রানের খাতা না খোলা মিচেল স্টার্ক।
দলীয় ২৯৪ রানের মাথায় মঈনের বলে মারতে যান প্যাট কামিন্স। বল তার ব্যাটে লেগে ঊরুতে লাগার পর লেগ স্লিপে থাকা স্টোকস ক্যাচ নিলে জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় ইংল্যান্ড।
নবম উইকেটে অ্যালেক্স ক্যারি ও টড মার্ফি লড়াই চালিয়ে যান। তাদের জুটিতে সফরকারীদের জয়ের ক্ষীণ আশা জাগতে থাকে। স্টুয়ার্ড ব্রডের সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে ১৮ রান করা মার্ফি উইকেটের পেছনে ধরা পড়ে ফেরেন। ভাঙে ৩৫ রানের জুটি।
পরের ওভারে ব্রডের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ ফেলেন ক্রাওলে, জীবন পান ক্যারি। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নন ব্রড। সুইংয়ে ২৮ রান করা ক্যারিকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন। দুই হাত প্রসারিত করে জয়ের আনন্দে নিজে ভাসলেন, গোটা ইংল্যান্ডকে ভাসালেন।
স্বাগতিকদের হয়ে ওকস ৪টি ও মঈন ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া, ব্রড দুটি ও উড একটি উইকেট ঝুলিতে ভরেন।