বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা এনে দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অর্পিতা বিশ্বাস। মাগুরার মেয়ের এমন সাফল্যের পেছনে বড় অবদান আছে পরিবারের। প্রতিদান দিতে চান অর্পিতা। জানালেন, বাবা-ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতেই ফুটবলে অঙ্গনে পা রাখা। সাফল্যের যে শুরুটা পেয়েছেন, সেটি টেনে নিতে চান বহুদূর।
বুধবার চ্যানেল আই সংবর্ধনা দিয়েছে সাফজয়ী দলকে। বাফুফের বাসে চড়ে সকাল ১১টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এসেছিলেন শিরোপাজয়ী বীরকন্যারা, ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয় অর্পিতা-প্রীতিদের। পরে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক অর্পিতার বিশ্বাসের।
কোন পজিশনে খেলতে ভালোবাসেন?
অর্পিতা: স্টপার হিসবেই খেলতে এখন ভালো লাগে। আগে মিডফিল্ডে খেলতাম, তবে এখন স্টপারে খেলতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। যখন বাফুফে ক্যাম্পে আসি তখন ছোটন (গোলাম রাব্বানী) ও স্মলি (পল) স্যার ছিলেন, তারা আমার উচ্চতা দেখে আমাকে স্টপারে খেলার পরামর্শ দিলেন। এরপর থেকেই আসলে এই পজিশনে খেলছি। এখন আসলে এই পজিশনে খেলতেই বেশি ভালো লাগে।
সামনে থেকে দলের নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারটা কেমন উপভোগ করেন?
অর্পিতা: আসলে প্রথমবারের মতো আমি জাতীয় (অনূর্ধ্ব-১৬ নারী) দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। এটা আসলে খুবই ভালো লাগার বিষয়। ভাবতেও পারিনি এই দলের দায়িত্ব পালন করতে পারব। যখন খেলা শুরু করি, তখন থেকেই এটা আমার একটি স্বপ্ন ছিল যে, হয়ত কোনো একদিন অধিনায়ক হিসেবে খেলতে পারব। সেই স্বপ্নটাও এবার পূরণ হয়েছে।
পূরণ হওয়া স্বপ্নটাকে এবার কতদূর নিতে চান?
অর্পিতা: এখন আসলে অনূর্ধ্ব-১৬ এর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছি, আমার স্বপ্নটা আসলে নিজেকে সিনিয়র লেভেলে সাবিনা আপুদের জায়গায় নিতে চাই। আর জাতীয় দলে মাসুরা আপুকে অনুসরণ করি, যেহেতু তার পজিশনে আমি খেলি, তাই তাকেই আমার অনেক পছন্দ।
ফুটবলে শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
অর্পিতা: প্রাথমিক স্কুলে থাকার সময় স্যার একটা টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট। ওইটাই আমাদের স্যার প্রথম শুরু করেছিলেন। ওই সময়ে খেলার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। তবে আমাদের সিনিয়র আপুদের দেখতাম তারা বিকেএসপিতে সুযোগ পেত, তাছাড়া স্যারও আমাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য বলতেন, ‘তোমাদের আপুরা খেলছে, সুযোগ পাচ্ছে, ভালো অবস্থানেও যাচ্ছে। তোমরা কি চাও না এমনকিছু করতে?’ এসব শুনে শুনেই আসলে খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ বাড়তে থাকে। আর বড় আপুদের সেই সুযোগগুলো নেয়ার ইচ্ছা থেকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহটাও বাড়তে থাকে।
পরিবার থেকে কেমন সমর্থন পেয়েছিলেন?
অর্পিতা: আমার পরিবার থেকে আসলে কখনই কোনো বাধা আসেনি। সবসময় সহযোগিতা পেয়েছি। মা-বাবা আর বড় ভাই নিয়েই আমার পরিবার। বাবা সবজির ব্যবসা করেন। আমার ভাই অটো গাড়ি চালান। আমাদের গ্রামেই।
আসলে আমার পরিবারের অবস্থা খুব বেশি ভালো না। যখন প্রথমে খেলা শুরু করি, তখন থেকেই আমার টার্গেট পরিবারের জন্য কিছু করার। আমার বাবার একটু সমস্যা আছে। তিনি একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। বাবা যখন সবজির ব্যবসা করতেন, তখন ঢাকা থেকে ট্রাকে করে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন।
যে কারণে মাঝেমধ্যেই তিনি কাজে যেতে পারেন না। আমার ভাই ক্লাস টেনে পড়ার সময়ই পড়ালেখা ছেড়ে দেন। সেই সময়ে বাবা ওকে পড়াশোনা করাতে পারেনি। ওই মুহূর্তে (পরিবারের হাল ধরতে) বাবার পাশে দাঁড়াতে হয়েছিল ভাইকে। আসলে তখন থেকেই আমার মধ্যে কাজ করে আমিও আমার বাবার পাশে, ভাইয়ের পাশে এসে একদিন দাঁড়াবো।
সামনে ঈদ, ঈদের আগে এমন একটি প্রাপ্তি নিশ্চয় ঈদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেবে। ঈদ নিয়ে পরিকল্পনা কি, বাড়ি যেতে চান কবে?
অর্পিতা: বাফুফে থেকে আসলে অনেক সময় ছুটি দেয়, আবার অনেক সময় দেয় না। তবে এখনও আমরা জানি না ঈদে ছুটি পাবো কি পাবো না। যদি ছুটি পাই অবশ্যই বাড়ি গিয়ে সমার সঙ্গে আনন্দ, মজা করব। আমার বাবা-মা ও ভাইয়ের অনেক বয়স হয়ে গেছে। চেষ্টা করব নিজের প্রথম উপার্জন থেকে কিছু উপহার দিতে।
ঈদে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে কি চান?
অর্পিতা: অবশ্যই ছুটি চাই। কারণ অনেকদিন ধরেই ক্যাম্পে আছি, ছুটি পাওয়া হয় না। তবে আমাদেরকে আগেই স্যার বলে দিয়েছিলেন, তোমরা খেলে আসো এরপর তোমাদের ছুটি দেয়া হবে। স্যারও আমাদের ছুটি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।