বেশ কয়েক মাস যাবৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে ভারতীয় তরুণ আরিফ খান গুর্জার ও একটি সারস পাখির বন্ধুত্ব। বিপন্ন অবস্থায় পাখিটিকে উদ্ধার করে লালন-পালন করার পর তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাখিটিকে কানপুর চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরিত করে কর্তৃপক্ষ। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে পাখিটিকে মুক্ত করে দেয়ার দাবি উঠে। তবে এবার পাখিটি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানালেন আরিফ নিজেই।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে আরিফ জানান, এবার কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে, খাঁচা থেকে মুক্ত করে পাখিটিকে অভয়ারণ্যে স্থানান্তর করা উচিত। এটি আমার অনুরোধ।
আরিফ এক বছর আগে একটি মাঠে পাখিটিকে আহত অবস্থায় দেখতে পান। তিনি বলেন, আমি একে সুস্থ করে তুললাম। তারপর সে বনে ফিরে গেল, সময়মত আমার সাথে দেখাও করত। বনাঞ্চল থেকে তার বাসা প্রায় এক কিলোমিটার দূর হলেও পাখিটি দেখা করতে আসত।
আরিফের স্কুটারে চড়ে পাখিটিকে অনুসরণ করার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ‘লাইক’ এর বন্যায় ভাসছে। সারস হলো উত্তরপ্রদেশের রাজ্য পাখি যা বাড়িতে রাখা বেআইনী। ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার পরপরই বন বিভাগের কর্মকর্তারা গত মাসে পাখিটিকে নিয়ে যান এবং বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনের বিভিন্ন ধারায় আরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
আরিফের বিরুদ্ধে বন বিভাগের এই পদক্ষেপ জনসাধারণের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কেন সুন্দর বন্ধুত্বকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে তা অনেকেরই প্রশ্ন ছিল। অবশ্য অনেকেই আবার আইনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, তারা প্রেমের পরিবেশকে ভালবাসে না, তা মানুষ এবং মানুষের মধ্যেই হোক বা মানুষ এবং পাখির মধ্যে।
এছাড়াও ভারতের বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী একটি টুইটে সারস পাখিকে মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, পাখিটিকে তার কাছেই ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, যিনি এটিকে উদ্ধার করে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লালন পালন করেছেন।
তবে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব বলেছেন, বিপন্ন প্রজাতির পাখির যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভুল নেই, কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানানোটা দায়িত্ব।
এ বিষয়ে আরিফ বলেন, পাখিটা আমার বন্ধু। দুই বন্ধু যখন আলাদা হয় তখন কেমন লাগে আপনি বুঝতে পারবেন। বন বিভাগ সারসটিকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি বাড়ি যাইনি।
চিড়িয়াখানায় পাখির সঙ্গে সম্প্রতি সাক্ষাত করতে যান আরিফ। তিনি বলেন, এটা আমাকে সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পেরেছে এবং লাফাতে শুরু করেছে। হয়তো তার মনে হয়েছে, এখন আরিফ এসেছে। সে আমাকে খাঁচা থেকে বের করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। চিড়িয়াখানার নিয়ম এবং প্রটোকল। তাই আমি ফিরে এসেছি।
পাখিটি কেমন আছে জানতে চাইলে আরিফ বলেন, খাঁচায় বন্দি থাকলে কেউ ভালো থাকে কী করে? পাখিটিকে বাড়িতে রাখার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এটাকে বাড়িতে রাখিনি, জঙ্গলেই থাকত। যখনই পাখিটার ক্ষুধা পেত বা দেখা করতে চাইত, তখনই ও আমার দোরগোড়ায় আসত। আমি ওকে খাওয়াতাম পরে ও বনে ফিরে যেত।
বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীসহ অনেক নেতা কথা বলার পরে বিষয়টি রাজনৈতিক মোড় নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন, দয়া করে এটাকে রাজনীতি বলবেন না, মানুষ সমর্থনে আছে। সবাই চায় পাখিটি মুক্ত হোক।