আনা ফ্রাঙ্ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হলোকস্টের (ইয়াহুদি গণহত্যা) শিকার সর্বাধিক আলোচিত ও বিখ্যাত ইহুদি ব্যক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার তার দিনলিপি এখনও বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক পঠিত বই এবং অনেক চলচ্চিত্র ও নাটকের মূল বিষয় হিসেবে গৃহীত!
তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন তার দিনলিপির জন্য, যেখানে তিনি নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন তার অভিজ্ঞতাগুলোকে লিখে রেখেছিলেন। যেখানে আনার জীবনের ১২ জুন ১৯৪২ থেকে ১ আগস্ট ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সময়ের ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে। সেই আনা ফ্রাঙ্কের দিনলিপি নিয়ে ঢাকায় প্রদর্শীত হলো নাটক ‘আনা ফ্রাঙ্ক’।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় ‘ম্যাড থেটার’ নাট্যদলের নাটক ‘অ্যানা ফ্রাঙ্ক’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী ‘ভাষার সঙ্গ, নাট্যরঙ্গ বাংলাদেশ উৎসব’-এর আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি।
নাটকটির প্লেরাইট আসাদুল ইসলাম ও ডিরেকশন দিয়েছেন কাজী আনিসুল হক বরুণ। নাটকটিতে একক চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর্য মেঘদূত।
ডিরেক্টর কাজী আনিসুল হক বরুণ বলেন, আনা আমার অনিবার্য মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অবিরাম বেঁচে থাকার এক অসম্ভব অনুপ্রেরণা। আনা আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক অসহায় কিশোরী মেয়ের অথবা আশাহত মায়ের কিংবা নির্যাতিতা নারীর এক অদ্ভুত প্রতিচ্ছায়া…!
“এই নাটকে যে অ্যানা ফ্রাঙ্কের চরিত্র নির্মাণের চেষ্টা করেছি তা অনেকটা এইরকম; ইতিহাসের আলোচনা থেকে আনা ফ্রাঙ্কের যে পরিচয় পাওয়া গেছে, সেই পরিচিত জীবন যাপনের ধারাবাহিক চর্চার ভেতরের যে স্বতঃস্ফূর্ত লৌকিক আচরণ তা বাদ দিয়ে, ডায়েরির পাতায় ভেসে উঠা যে অকপট, নির্ভীক আর গম্ভীর আনাকে পাওয়া যায়, আমি সেই আনাকে মঞ্চে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি।”
নাটকটির প্লেরাইট আসাদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ধূসর সময়ের টালমাটাল বাস্তবকে বায়ুমণ্ডলের এককোনায় বসে তেরো বছরের চোখ দিয়ে আনা ফ্রাঙ্ক নামের এক কিশোরী তার ডায়েরির পাতায় শব্দের উল বোনে। মৃত্যুর মঞ্চে দাঁড়িয়ে জীবনকে উপভোগ করা, সময়কে সদ্ব্যবহার করা, জ্ঞানতৃষ্ণা জারি রাখা, স্বপ্নকে সুসংস্কৃত করা, প্রেমে গোলাপী হওয়া, কল্পনাকে আলোকসজ্জিত রাখা, শুধু তাই না, লেখনী দিয়ে সেসবের বিন্যাস ঘটানো আনার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। সেই আনার সৃজনী সত্তার সংস্পর্শে এসে আমার আত্মা আত্মগ্লানিতে জারিত হবেই। আনার জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী আজও নির্মিত হলো না। অ্যানাদের চলে যেতে হয়ে যুদ্ধবাজদের হিংসার বলি হয়ে। আনাদের বয়সের গণ্ডি তেরো থেকে পনেরো পেরিয়ে কখনো ষোলোতে পৌঁছায় না। এই বেদনাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে শতাব্দীর পর শতাব্দী, কিন্তু পৃথিবীর সুন্দর স্বপ্নগুলো, সম্ভাবনাগুলো হারিয়ে যাবে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে, ক্রিমেটোরিয়া বার্নারে, গ্যাস চেম্বারে, বোমা বা গুলির আঘাতে। আনাদের আমরা বাঁচাতে পারি না। আমাদের ক্রীতদাস স্বভাবের দরুণ। আনার মতো বোধ যখন আমাদেরও মধ্যে জাগ্রত হবে, সেদিন আমরাও সুখী পৃথিবী নির্মাণে ব্রতী হব, ততদিন পর্যন্ত আনার স্বপ্নকে দূর থেকে দর্শক হয়ে দেখে অশ্রুপাত করা ছাড়া আমাদের ভিন্ন কোনো গতি হবে না।
নাটকটির লাইটিংয়ে ছিলেন নাসিরুল হক খোকন, সেটে অনন্তি হোসেন, কস্টিউমে সোনিয়া হাসান সুবর্ণা, সাউন্ডে খুরশীদ হোসেন, গ্রাফিক্সে লাকী ওসমান, মেকাপে শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, সোনিয়া হাসান সুবর্না, লাইট অপারেশনে কাজী রোকসানা রুমা, আশরাফুল ইসলাম সায়ান, সাউন্ড অপারেশনে শংকর কুমার বিশ্বাস, সেট এক্সিকিউশনে দেবাশীষ কুমার দে প্রশান্ত, নাভেদ রহমান, ফটোগ্রাফিতে ম্যাড ফটু, শতফুল আলোক চিত্র, গুন গুন ছবি বাড়ি, প্রিন্টিংয়ে নকচারনাল কমিউনিকেশনস লি., অ্যাকনলেজমেন্টে সুবচন নাট্য সংসদ, চিফ অ্যাডভাইজার, ম্যাড থেটার: অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন, চিফ এক্সিকিউটিভ: সোনিয়া হাসান সুবর্ণা।
‘২৩তম ভারত রঙ মহোৎসব ২০২৪’-এ নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হবে আসামের ডিব্রুগড় ও এলটিজি অডিটরিয়াম, দিল্লিতে। ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ন্যাশন্যাল স্কুল অব ড্রামা আয়োজিত এ উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদশ থেকে পাঁচটি দল আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলগুলো হলো- ম্যাড থেটার (অ্যানা ফ্রাঙ্ক), থিয়েটার ফ্যাক্টরি (আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে), নাট্যম রিপার্টরি (দমের মাদার), বটতলা (খনা) ও স্বপ্নদল (চিত্রাঙ্গদা)।