শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টিতে ঝলক দেখিয়েছেন জাকির আলি অনিক। ৩৮ বলে ৬৮ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছেন সিলেটের মাটিতে। অ্যাথলেট পরিবারে বেড়ে ওঠা অনিকের জীবনসঙ্গিনী নাফিসা তাবাসসুমও একজন জাতীয় শ্যুটার। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন বেশ কয়েকবার। জিতেছেন পদকও।
বিকেএসপিতেই বেড়ে ওঠা দুজনের। অনিক ক্রিকেটে, আর নাফিসা শ্যুটিংয়ে। খেলা আলাদা হলেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করাই ছিল লক্ষ্য। একই ক্যাম্পাসে বেড়ে ওঠার খাতিরে একে অন্যের প্রতি ছিল ভালোলাগা। একসময় বদলে যায় ভালোবাসায়। এরপর ২০২০ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেন দুজনে।
দিনাজপুরের মেয়ে নাফিসা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে সাফল্য পেয়েছেন বছর দুয়েক আগেই। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আন্তর্জাতিক শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের (আইএসএসএফ) গ্রাঁ প্রিতে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে জিতেছেন ব্রোঞ্জ। সরাসরি আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে প্রথম পদকটা এসেছে নাফিসার হাত ধরেই। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের মিশ্র দলগত এবং মেয়েদের দলহত ইভেন্টেও বোঞ্জ জেতায়ও রেখেছেন অবদান।
২০২১ সালে বাংলাদেশ গেমসে সোনা জিতেছিলেন নাফিসা। হামিদুর রহমান জাতীয় যুব শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপেও জিতেছিলেন সোনা। ২০১০ এসএ গেমসে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে শারমিন সোনা জেতার পর এই ইভেন্টে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে নাফিসার হাত ধরে।
অন্যদিকে জাতীয় দলের কড়া নেড়েও কপাট খুলতে বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে অনিকের। শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রাথমিক দলেও ছিলেন না। আলিস আল ইসলামের চোটের কারণে কপাল খোলে তার। প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েই ঝলক দেখান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটার। সেই সঙ্গে টি-টুয়েন্টি একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৬টি ছক্কা মারার রেকর্ডও তার।
জাকিরের বাবা শওকত আলীও ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট ছিলেন তিনি। পাঁচ ভাই-বোনের পরিবারে চারজনই অ্যাথলেট। বোন শাকিলা ববি ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বর্তমানে একটি সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করছেন।
জাকেরের খেলা দেখতে মাঠে ছিলেন তার বোন ববি ও দুলাভাই। হবিগঞ্জ থেকে অবশ্য আসতে পারেননি স্ত্রী নাফিসা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। না আসলেও জাকেরের খেলা দেখেছেন টিভিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেও এসেছিলেন ববি। ভাই জাকিরকে প্রশ্নও করেছিলেন।
সাফল্য পাওয়ার আগে জাকির হবিগঞ্জে বোন শাকিলা ববির ভাই বলেই পরিচিত ছিলেন। জেলা মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন ববি। পরে নাফিসা দেশের হয়ে শ্যুটিংয়ে পদক জেতায়-অনেকে চিনতেন নাফিসার স্বামী হিসেবেও।
দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের আগমনি বার্তাই দিলেন জাকির। সামনের ম্যাচগুলোতেও মেলে ধরবেন নিজেকে ব্যাটের ঝলকে। অন্যদিকে নাফিসাও শ্যুটিংয়ে দুরন্ত। তাতে বলাই চলে ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল তারকা জুটি নাফিসা-অনিকের হাত ধরে অদূর ভবিষত্যে আসবে দেশের সাফল্য।