‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’র মূলমন্ত্র নিয়ে ছুটে চলেছেন চিত্রনায়ক, প্রযোজক অনন্ত জলিল। ব্যবসার পাশাপাশি সিনেমাতেও দাগ রাখতে মরিয়া এই চিত্রনায়ক! সেই প্রেক্ষিতে প্রায় নয় বছর পর মুক্তি পাচ্ছে অনন্ত জলিলের নতুন সিনেমা ‘দিন দ্য ডে’। ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত এ সিনেমাটি প্রসঙ্গে অনন্ত তার মোহাম্মদপুরের নিজ অফিসে বসে আলাপ করেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
‘দিন- দ্য ডে’ ছবিতে নতুনত্ব কী আছে?
কী নতুনত্ব নেই? গল্প, মেকিং, সাউন্ড, লোকেশন থেকে পোস্ট প্রোডাকশন সবকিছুতেই নতুনত্ব। আমার এই ছবিতে যে সাউন্ড দিয়েছি সেটা বিশ্বের নাম্বার ওয়ান সাউন্ড সিস্টেম অ্যাটমোস সেভেন পয়েন্ট ওয়ান ব্যবহার করেছি। বিশ্বে যা নতুনত্ব আছে, তাই আছে আমার ‘দিন- দ্য ডে’তে। ছবি মুক্তির পর বোঝা যাবে প্রশংসা পাবে নাকি মুখ থুবড়ে পড়বে।
শুনেছি, ‘দিন দ্য ডে’ ছবির সবকিছু আপনি গুছিয়েছেন? সিনেমা তৈরির জন্য সবকিছু সামলানো কঠিন?
আসলে সবকিছু গোছাতে গিয়ে আমি তেমন অভিনয়ের সুযোগ পাই না। ‘দিন- দ্য ডে’ শুটিং থেকে এখন স্ক্রিনিংয়ের সময় এসেছে। প্রতিদিন রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ভোরে নামাজ আদায় করে আবার কাজে নেমে পড়ি। প্রতিটি জিনিস আমাকে করতে হয়। শুটিংয়েও সবকিছু রেডি করে আমি ক্যামেরার সামনে গিয়েছি। শুটিংয়ের আগে বাইরের পরিচালক ও টিমের সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ করতে হয়েছে। এখন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। এ ধরনের ছবি বানানো সহজ কথা না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাহেব থাইল্যান্ডে ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’র শুটিং করতে গিয়ে আমাকে বলেছিলেন, ‘এমন হিরো আমরা আগে দেখি নাই। হিরোরা ছাতা নিয়ে বসে থাকে। সব রেডি হলে ডাক পেলে ক্যামেরার সামনে যায়। কিন্তু অনন্ত জলিল একা ফাইট, কোরিওগ্রাফি থেকে সবকিছু গুছিয়ে দেয়।’ দক্ষিণ ভারতের রজনীকান্তের একটা ইন্টারভিউ দেখেছিলাম। রজন্তীকান্তকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কমল হাসান ও রজন্তীকান্তের মধ্যে কে বেস্ট? রজন্তীকান্ত বলেছিলেন, ক্যারিয়ারে আমি শুধুই অভিনয় করেছি। কিন্তু কমল হাসান স্কিপ্ট, ডিরেকশন, প্রযোজনা সবকিছু করেন। তারপর তিনি অভিনয় করেন। যেহেতু কমল হাসান ‘অল ইন ওয়ান’ তাই আমার কাছে উনি বেস্ট। যারা মহৎ ব্যক্তি তারা এভাবে সরাসরি স্বীকার করে ফেলেন।
আপনি দেশের স্বনামধন্য পোশাক ব্যবসায়ী। ‘খোঁজ- দ্য সার্চ’ থেকে ‘দিন- দ্য ডে’- আজ পর্যন্ত সিনেমা ব্যবসা কেমন বুঝলেন?
পৃথিবীতে সিনেমার ব্যবসা অনেক বড় ব্যাপার। শুরুতে আশা ছিল বিদেশে যদি আমাদের সকল সিনেমা এক্সপোর্ট করতে পারি, তাহলে অনেক ভালো হবে। প্রবাসীদের মতো সিনেমার মাধ্যমেও রেমিটেন্স আসবে। ইয়েফা সিস্টেম করতে চেয়েছিলাম। যাতে প্রত্যেক প্রযোজক নিজের অফিস থেকে ছবি মুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু তখন তো বুঝি নাই সিনেমা মানুষদের নিজেদের মধ্যে এতো কোন্দল। এনারা কেন বোঝে না অন্যদের নিন্দা করলে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে কোনোদিন নিজের উন্নতি হবে। হোটেল ৭১-এ সকল প্রযোজকদের এক করেছিলাম দলাদলি বন্ধের জন্য। কিন্তু সেটা ফলপ্রসূ হয়নি। আমার আসলে সিনেমার ব্যবসা নিয়ে অনেক চিন্তা ছিল। কিন্তু ঝগড়া আর নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলের কারণে পারিনি। এখন আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি।
এতো বড় আয়োজনের ছবি, কিন্তু আমাদের সিনেমা হলের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। কী ভাবছেন?
‘দিন দ্য ডে’র মতো ছবি সঙ্গে যদি কেউ রিলিজ করেন তাহলে করুক। রিলিজের পর বোঝা যাবে কার ছবি কেমন। আমি বড় বা ছোট স্টার হতে পারি, আমার ছবি ফ্লপ হতে পারে। আবার যে পরীক্ষিত বড় স্টার তার ছবিও ফ্লপ হতে পারে। যেমন অক্ষয় কুমারের পর পর দুই ছবি ফ্লপ করলো। আমি মনে করি স্টারের উপর সিনেমার হিট ফ্লপ নির্ভর করে না। ছবির কোয়ালিটি, গল্প ও মেকিংয়ের উপর ছবির হিট ফ্লপ নির্ভর করে। শাহরুখ খানের শেষ হিট মুভি অনেক আগের। অথচ তিনি বলিউডের নাম্বার ওয়ান হিরো। সালমান খানের ‘দাবাং’ ও ‘দাবাং ২’ বাম্পারহিট কিন্তু ‘দাবাং ৩’ ফ্লপ করলো। তাই আমার ছবি চলবে এই বলে গর্ব করতে নেই। তবে হ্যাঁ, স্টার দেখে মানুষ সিনেমা হলে যায় এটা সত্য।
‘দিন দ্য ডে’র বাজেট কি সত্যিই ১০০ কোটি টাকা?
ইরানের অ্যাকশন কিংবা ওয়ার ভিত্তিক ছবিগুলোর বাজেট ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার। গল্প তৈরি করার পর তারা বাজেট জানালো ‘দিন- দ্য ডে’ ছবিতে ১০ মিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি টাকার মতো লাগবে। আমি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মার্কেট ছোট, সিনেমা হল কম। যদি ছবি করতে চান, শুধুমাত্র বাংলাদেশের অংশের শুটিংয়ের খরচ আমি দিতে পারবো। তখন ইরানের ফারাবি ফাউন্ডেশন ও ট্যুরিজমের সহযোগিতায় বাজেট ১০ মিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটিতে ফাইনাল হয়। ইরানের শুটিং প্ল্যান ছিল ৪৫ দিন, কিন্তু দুই লটে শুটিং করতে হয় ৫৭ দিন। এখানে বাজেট বাড়ে। পরে তুরস্কে শুটিং করতে হয়। এতে আরও ২ মিলিয়ন ডলার বাজেট বাড়ে। ছবিতে স্ক্রিনে বাংলাদেশ থেকে ১৭ মিনিটের মতো যা বাংলাদেশে শুটিং হয়েছে। বিহাইন্ড দ্য সিন বা পুরো সিনেমা মুক্তির পর দর্শক বুঝবেন আসলে এত টাকা কোথায় লেগেছে।