পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেছেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রচলিত সঞ্চয় স্কিমের মতো মনে হলেও এটি পেনশন গ্রহীতাদের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। পেনশন খাতে জমাকৃত অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। এর জন্য সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। যারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে নির্বাচনী তহবিল যোগানের উদ্যোগ হিসেবে দেখছে, তাদের সেই সমালোচনা যথার্থ নয়। সরকার কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা থেকে নাগরিকদের দীর্ঘ মেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ‘সামাজিক সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের বৃদ্ধ অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। হিসাব নিকাশ করে ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে এই স্কিম শুরু করা হয়। যা বর্তমান সরকারের সাহসী উদ্যোগ। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর ভাতা অব্যহত রেখেই উপকারভোগিরা পেনশন স্কিমে অন্তর্ভূক্ত হতে পারলে আরো ভালো হতো। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতি বেড়েছে সন্দেহ নেই। উচ্চবিত্ত পর্যায়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে। এসব দুর্নীতিবাজরা ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাইসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করছে। ব্যাংকিং খাতেও এসব প্রভাবশালীরা অর্থ লুটপাটের ঘটনায় জড়িত। দুই একজনকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হলেও, টাকা পাচারের সাথে জড়িত আরো অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
দেশের উন্নয়ন খাতের জন্য ঋণ নিয়ে পেনশন স্কিমের অর্থ কাজে লাগানো হবে বলেও জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পেনশন স্কিম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঝুঁকিমুক্ত ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থিকভাবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক, ট্রেজারি বন্ড, লাভজনক অবকাঠামোতে পেনশন স্কিমের টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি যাতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তাবায়নে বাধা না হয়, সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই পেনশন পেতে হেনস্তার শিকার হতে হয় কিনা, সে ব্যাপারেও জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে।
সমতা স্কিমের আওতায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের ৫০ শতাংশ চাঁদা প্রদানের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। সমতা স্কিমে যাদের আয় বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকা তারা ৫০০ টাকা দিলে সরকার ৫০০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করবেন। বেসরকারি চাকুরিজীবিদের জন্য প্রগতি স্কিমে প্রতিষ্ঠান চাইলে চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করতে পারবে। তবে প্রগতি স্কিমে মালিক পক্ষের চাঁদা দেয়ার বিষয়টি শ্রমআইনে অন্তর্ভূক্ত করে নির্দেশনা প্রদান করলে বেসরকারি চাকুজীবিরা উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনাকে টেকসই ও আর জনবান্ধব করতে ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করা হয়।
“সর্বজনীন পেনশন স্কীম দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সুরক্ষায় সহায়ক হবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি তিতুমীর কলেজ এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক শেখ নাজমুল হক সৈকত, সাংবাদিক জাকির হোসেন ও স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিজ্ঞাপন