শুটিং মানেই উত্তরা! হোক সেটা নাটক কিংবা সিনেমার। নাগরিক গল্পে ইনডোর শুটিংয়ের জন্য নির্মাতা, প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ উত্তরার বিভিন্ন শুটিং বাড়ি। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বর্তমানে অনলাইনেও বাড়ছে কাজের চাপ। কন্টেন্ট যুগান আর চাহিদার সাথে তাই নিত্য নতুন হচ্ছে শুটিং হাউজও। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই শতভাগ পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে উত্তরায় যাত্রা শুরু করেছে ‘রং ঢং শুটিং হাউজ’।
রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর সেক্টরের ২৫ নম্বর বাড়িতে এই শুটিং হাউজটি সম্প্রতিই যাত্রা শুরু করেছে। এরইমধ্যে নাটক সিনেমা ও আর বিজ্ঞাপনের শুটিংও সম্পন্ন করেছেন কেউ কেউ।
একেবারে নতুন ভাবনা নিয়ে শুরু করা এই শুটিং হাউজটি নিয়ে কথা বলেন রং ঢং শুটিং হাউজটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন রহমান। জানান, আমরা কেবল যাত্রা শুরু করলাম। এরইমধ্যে আমাদের শুটিং হাউজটিতে কাজ করেছেন নির্মাতা এসকে শুভ, খাইরুল পাপন, কায়সার চৌধুরীর মতো নির্মাতারা। ইস্পাহানী আরিফ জাহান তার আসন্ন সিনেমা ‘হৃদিতা’র শুটিং করেছেন টানা ছয় দিন। হয়েছে বিজ্ঞাপনেরও শুটিং।
এখন শুধু ঈদ, পূজা কিংবা উৎসব কেন্দ্রিক নয়, প্রচুর প্লাটফর্ম আর দর্শক চাহিদার কারণে সারা বছরই ব্যস্ততায় কাটে নাট্যকার, নাট্যনির্মাতা ও শিল্পীদের। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নাটক, টেলিছবি, ওয়েব সিরিজ আর ধারাবাহিকের কাজ হচ্ছে লাগামহীনভাবে। আর এসব মাথায় রেখেই রং ঢং শুটিং বাড়ি বেশ পরিচ্ছন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে বলেও জানান রিপন রহমান।
শুটিং করতে এসে নির্মাতা, কলাকুশলীরা বিশেষ কী সুবিধা পাবেন? এমন প্রশ্নে রং ঢং এর এই কর্মকর্তা জানান, দুটো বড় বড় ফ্লোর নিয়ে একটা টিমের কাছে আমরা ভাড়া দিচ্ছি। নরমালি অন্য শুটিং হাউজে যেটা হয়, একেকটা ফ্লোর এক একটা টিমকে ভাড়া দেয়। কিন্তু আমরা দুটো ফ্লোর একজন ডিরেক্টর এর কাছে দিচ্ছি। আমাদের হাউজে বেডরুম আছে, হাসপাতালের সেটআপ করা যাবে, জেলখানার সেটআপ করা যাবে, অফিসের সেটআপ করতে চাইলে করা যাবে, আধুনিক অফিসের সেটআপ আছে। ব্যাচেলরদের জন্য রুম করতে চাইলে সেটাও আমাদের এখানে করা যাবে। এমনকি আমাদের ছাদে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগিয়েছি, সাধারণত শুটিং হাউজে এরকম ফেসিলিটি পাওয়া যায় না। আমাদের শুটিং বাড়ির আরেকটি প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, ছাদের বারান্দা থেকে রোড দেখা যায়। তো ডিরেক্টরের এরকম হাতের নাগালে সবকিছু কিন্তু খুব সহজে পাবেন না। বলা যায় একের ভেতর সব পাবেন আমাদের শুটিং বাড়িতে!
মাস্টারবেড রুমের বর্ণনা দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, একটি মাস্টারবেট আলনা ড্রেসিংটেবিল ওয়ারড্রব বসানোর পরও একই সাথে ঘরটিতে ট্রলি বসানো যাবে, এত বড় একটা রুম। লাইটিং এর জন্যও আছে দারুণ ব্যবস্থা। দুটো গেটসহ তিন পাশ থেকেই লাইট দেয়ার ব্যবস্থা আছে। ডিওপিদের মধ্যে অনেকেই আমাদের শুটিং হাউস দেখেছেন। যেমন জামান ভাই- তিনি নিজেও দেখে বলেছেন ‘বাহ্, লাইট করার দারুণ ব্যবস্থা আছেতো!’। শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ, উনিও দেখে বলেছেন ‘শুটিং বাড়িতে এত স্পেস কমই পাওয়া যায়।’
রং ঢং এর এই কর্মকর্তার দাবি, নিজে থিয়েটারকর্মী ও নাটকের এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন বলেই একটি আদর্শ শুটিং হাউজে কী কী সুবিধা থাকা প্রয়োজন, সেই ভাবনা থেকেই নিজেদের শুটিং হাউজটিতে সেসব সুবিধা তিনি রেখেছেন। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, কী কী ফেসিলেটিস থাকলে ডিরেক্টর কমফোর্ট ফিল করেন, তার সবই আমরা রাখার চেষ্টা করছি ‘রং ঢং শুটিং হাউজ’ এ। তিনি বলেন, আমাদের মেকআপ রুম, অন্য যে কারো মেকআপ রুম এর চেয়ে অনেক বড়। ড্রেস চেঞ্জ করার আলাদা জায়গা আছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ের প্রপসের যুগান দেয়ার ব্যবস্থাও রেখেছে রং ঢং শুটিং হাউজ। রিপন রহমান জানান, নাটক সিনেমায় পিতলের সেটের পর্যন্ত প্রয়োজন হলে আমরা সরবরাহ করতে পারবো। ১৯৭১ সালের কোন নাটক করতে চাইলে, কী ধরনের প্রপস দরকার হয় তার সবই আমাদের এখানে পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, প্রপসের হিউজ কালেকশন আছে আমাদের, এমনকি প্রপস হিসেবে ১৯৫২ বা ১৯৫৩ সালের পত্রিকার যুগানও আমরা দিতে পারবো।
ভার্চুয়াল মাধ্যমেও বেশ অ্যাক্টিভ রং ঢং শুটিং হাউজ। সামনে আছে আরো নতুন পরিকল্পনা। রিপন জানালেন, আমরা চাই- যারা এই মুহূর্তে কাজ করছেন, নাটক টিভিসি সিনেমা কিংবা হোক ওয়েব কনটেন্ট: তাদের কাছে একটাই অনুরোধ থাকবে, তারা যেন অন্ততপক্ষে একবার এসে আমাদের শুটিং হাউজটি দেখে যান।