বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম-এর মৃত্যুতে ফেনীর দাগনভূঞায় বিমান ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মহড়া দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগষ্ট) বিকেলে ফেনীর দাগনভুঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ করিমপুর গ্রামে তার গ্রামের বাড়ির ওপর এই মহড়া দেয়া হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ আমাদের ফেনীর গর্ব। তার মৃত্যুতে বিমান বাহিনী এই এলাকায় বিমান ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যে মহড়া দিয়েছে এতে আমরা ফেনীবাসী হিসেবে গর্বিত। তার মৃত্যুতে বিমান মহড়ার মাধ্যমে তাকে সম্মান জানানোয় আমরা ফেনীবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। এই এলাকার উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে অনেক। তিনি অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এই এলাকায়। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
এর আগে গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সুলতান মাহমুদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মৃত্যুতে গভীর শোকাহত চ্যানেল আই পরিবার।
১৯৪৪ সালে ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুনজরা মজলিস বাড়িতে (নানা বাড়ি) জন্মগ্রহণ করেন সুলতান মাহমুদ। পৈত্রিক বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলায়। তার বাবার নাম নূরুল হুদা এবং মায়ের নাম আঙ্কুরের নেছা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান।
স্ত্রীর নাম ফেরদৌস আরা মাহমুদ। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। তার তিন ভাইয়ের অন্য দু’জন কামাল মাহমুদ এবং জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন।
সুলতান মাহমুদ ১৯৬২’র ১ জুলাই বিমান বাহিনীর জিডি পাইলট হিসেবে সেসময়ের পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই নম্বর সেক্টর ও পরবর্তীতে সেক্টর এক-এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সেই সময়ের স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ।
৭১-এর ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নাগাল্যান্ডের বিমান ঘাঁটিতে গঠন করা হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম কিলো ফ্লাইট। ১০জন পাইলট, ৬৭ জন টেকনিশিয়ান, একটি এলয়েড থ্রি হেলিকপ্টার, একটি অটার ও একটি ডিসি থ্রি ডকোডা উড়োজাহাজ নিয়ে যার যাত্রা শুরু, প্রশিক্ষণ চলে ২ মাস। কিলো ফ্লাইটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুলতান মাহমুদ।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম অভিযানে ভারতের কৈলশহর বিমানঘাঁটি থেকে মাঝরাতে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বাংলার আকাশসীমায় প্রবশে করে সফল অভিযান পরিচালনা করেন কিলোফ্লাইটের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপোতে সফল আঘাত হানে স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বদরুল আলমের নেতৃত্বে একটি এলয়েড হেলিকপ্টার।