কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমাদের প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২০০ মানুষ। এতো জনসংখ্যার চাপ নিয়ে আমরা কৃষি উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছি। কৃষিতে আমাদের দেশের মতো আর কোন দেশের চ্যালেঞ্জ নিতে হয় না৷ আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কেআইবি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বিদ্যমান শস্য বিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালার সভাপতিত্বে ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. ইব্রাহিম।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা একটা টেকসই অবস্থানে আছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আশ্বিন কার্তিক মাসেও দেশের কোথাও খাদ্য নিয়ে হাহাকার নেই। প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় ভোজ্য তেল আমদানিতে, আমরা তিন বছরের যে পরিকল্পনা নিয়েছি তার মাধ্যমে ভোজ্য তেলের উৎপাদন কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ বাড়াতে পারবো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১ শতাংশ কম। আমাদের মূল্যস্ফীতির মূল কারণ আমদানি নির্ভরতা। সেটা কমাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
বাংলাদেশের কৃষকদের ম্যাক্রো ইকোনোমিক ড্রাইভার উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন: আমি বিশ্বাস করি বিশ্বে চলমান সংকট পরিস্থিতি আমরা তুলনামূলক ভালোভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবো শুধু আমাদের কৃষকদের জন্য। তাই আমাদের সব সময় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। টেকসই উন্নয়নের বড় খুঁটি এই কৃষি। একে শক্তিশালী করতে প্রয়োজন নতুন ধাঁচের কৃষি কৌশল ও জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি চর্চা।
ড. আতিউর রহমান কৃষকের সেচ খরচ কমিয়ে আনার জন্য সোলার ইরিগেশন পাম্পের জন্য বরাদ্দের পরামর্শ দেন।
সারাদেশের কৃষকদের মাঝে একটি পরিকল্পিত শস্য বিন্যাস প্রচলন ও ফসল উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ হচ্ছে এই কর্মশালার উদ্দেশ্য।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় উঠে আসে দেশের অঞ্চলভিত্তিক শস্য বিন্যাসের নানা বিষয়াদি। রোপা আমন, সরিষা এবং বোরো এই শস্য বিন্যাসে ফসল ফলালে ধানের উৎপাদন যেমন বাড়বে একই সাথে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সরিষার উৎপাদনও বাড়ানো যাবে।
বাংলাদেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ মেট্রিক টন। যার মাঝে ৩ লাখ মেট্রিক টন আমরা উৎপাদন করতে পারি। বাকি ২১ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। সরিষা উৎপাদন বাড়িয়ে ক্রমেই এই আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব।
এক্ষেত্রে প্রচলিত জাত সমূহের বাইরে গিয়ে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ও সরিষা চাষ করার প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত বোরো চাষের ধানের জাতগুলো হচ্ছে— ব্রি ধান- ৪৮, ৯৮, ৫৮, ৬৭, ৭৪, ৮৮, ৮৯, ৯২, ১০২ ; ব্রি হাইব্রিড ধান- ৩,৫; বঙ্গবন্ধু ধান ১০০৷ রোপা আমনের জাতগুলো হলো— ব্রি ধান- ৭১, ৭২, ৭৫, ৮৭, ৯০ এবং বি হাইব্রিড ধান-৬৷ আর সরিষার ক্ষেত্রে বারি সরিষা- ১৪, ১৭, ১৮ এবং বিনা সরিষা- ৯৷
যে সব এলাকায় সূর্যমুখী চাষ হয় সে এলাকায় সরিষার স্থলে বারি সূর্যমুখী-৩, তিল, তিসি ও বাদামসহ তেলজাতীয় ফসল চাষের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও এলাকাভিত্তিক মাটির গঠন, পানি প্রাপ্যতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন শস্য বিন্যাস ও মাঠ ব্যবস্থাপনার সুপারিশ উপস্থাপনা করা হয়।
কর্মশালায় বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক, কৃষি বিভাগের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, গবেষকবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।