এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
ইরানের প্রখ্যাত নির্মাতা মোহাম্মদ রসৌলফকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। কারাদণ্ডের সাথে তাকে চাবুক মারা, জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও জারি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে গোপনে ইরান ছেড়েছেন রসৌলফ। নির্মাতা নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
সোমবার নির্মাতার অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজ শেয়ার করা পোস্টে রসৌলফ লিখেছেন, ‘আমি আমার বন্ধু, পরিচিতজন ও সে সব মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা সদয়, নিঃস্বার্থভাবে ও কখনো কখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে সীমান্ত পার করে দিয়েছেন এবং আমাকে দীর্ঘ যাত্রার পর নিরাপদে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন।’
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্মাতার ছবির প্রিমিয়ার হবে। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে পাম দ’রের জন্য লড়বে ছবিটি। ‘দ্য সিড অফ দ্য সেক্রেড ফিগ’ নামের এই ছবিটি সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে ইরান সরকার। তোয়াক্কা না করায় নির্মাতাকে দেয়া হয় শাস্তি। ধারণা করা হচ্ছে এই ছবির প্রিমিয়ারে অংশ নেবেন নির্মাতা। ফ্রেঞ্চ ডিস্ট্রিবিউটরের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি এখন ইউরোপের এক অজানা স্থানে আছেন। তিনি তার সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকতে পারেন।’
‘ঝুঁকিপূর্ণ এক যাত্রা শেষে রসৌলফ নিরাপদে ইউরোপে পৌঁছে গেছেন। আশা করছি তিনি কান উৎসবে সিনেমার প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকবেন,’ জানিয়েছেন ফিল্ম বুটিক অ্যান্ড প্যারালাল ফোর্টিফাইভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিন-ক্রিস্টোফ সিমন।
‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ ছবির গল্প ইমান নামের এক ব্যক্তিকে ঘিরে। যিনি তেহরানের বিপ্লবী আদালতের একজন তদন্তকারী বিচারক। দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিবাদ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে তার মনে জন্মায় অবিশ্বাস এবং সন্দেহ। এক সময় তার বন্দুক রহস্যজনক ভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি সন্দেহ করা শুরু করেন যে স্ত্রী নাজমেহ এবং তার কন্যা রেজভান এবং সানা এই ঘটনায় জড়িত। তিনি বাড়িতে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেন, যার ফলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ধাপে ধাপে তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও পারিবারিক জীবনের চিত্র বদলে যায়।
প্রায় বিশ বছর ধরে সেন্সরশিপ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আসছেন রসৌলফ। নিজের পঞ্চম ছবি ‘আ ম্যান অব ইন্টিগ্রিটি’র জন্য ২০১৭ সালে নিষিদ্ধ হন মোহাম্মদ রসৌলফ। সিনেমা বানানো এবং দেশের বাইরে বের হওয়া, দুটোই বারণ তার জন্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই অভিযোগে এক বছর জেলও খাটতে হয়েছিল এই নির্মাতাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দাপুটে চলচ্চিত্র উৎসবের কল্যাণে বরাবরই চর্চায় থাকে ইরানি সিনেমা! সরকার আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলো সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরায় আইনি ঝামেলায় পড়েছেন সিনেমাগুলোর নির্মাতা-কলাকুশলীরা।
আগের মতো সরকারের প্রচারের খাতিরে সিনেমা নির্মাণ করেন না নির্মাতারা। সংস্কৃতি ও ইসলামিক গাইডেন্স মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনুমতির তোয়াক্কাও করেন না। ২০০০-এর দশকে, মোহাম্মদ রসৌলফের মতো বড় নির্মাতারা স্বাধীন ধারার সিনেমার দিকে ঝুঁকেছেন। উদীয়মান নির্মাতারা তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন এবং বিদেশী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে অংশ নিয়ে সেগুলো প্রদর্শন করছেন। আর এমনটা রুখতেই নির্মাতা কিংবা শিল্পীদের উপর প্রায়শই শাস্তির খড়গ নেমে আসছে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস