সিনেমার বাইরে এবারই প্রথম শর্টফিল্মে অভিনয় করলেন অভিনেতা এবিএম সুমন। ভালোবাসা দিবসে বঙ্গের উদ্যোগে নির্মিত লাভ স্টোরিজ সিরিজের চারটি শর্টিফিল্মের মধ্যে একটি হচ্ছে মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ‘বুকিং’। এতে অভিনয় করে নজড় কেড়েছেন বড়পর্দার এই ‘মাসুদ রানা’।
মুক্তির পর থেকে ‘ট্রিমেন্ডার্স রেসপন্স’ পাচ্ছেন বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন এবিএম সুমন। কেন হুট করে শর্টফিল্মে অভিনয় করলেন?
সুমন যেমনটা বললেন, ‘বুকিং’ করার প্রথম কারণ পরিচালক আরিয়ান। চাচ্ছিলাম প্রেমিক অথবা সাইকো লাভার ক্যারেক্টার করতে। রোম্যান্টিক গল্প প্রেজেন্টেশনে আরিয়ান অতুলনীয়। তার সঙ্গে এর আগে একটি মিউজিক ভিডিও করেছিলাম। সেটিও খুব ভালো হয়েছিল। ‘বুকিং’ করেও আই ফিল ভেরি গুড। পরীমনির সঙ্গে আমার এর মাধ্যমে প্রথম কাজ হলো। দৃশ্যে যেভাবে অভিনয় করেছি সেটা একেবারে ‘র’। ঘুম থেকে উঠে দাঁত না মেজে ওভাবে অভিনয় করেছি। এখন আরিয়ান যদি আমাকে কোনো চরিত্রের জন্য তিনমাস বসে থাকতে হবে, আমি তাকে বিশ্বাস করে সেটাই করবো।
বড়পর্দায় পুলিশ ও গোয়েন্দা চরিত্রে ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘অন্তর্জাল’, ‘এমআর নাইন’ (মাসুদ রানা)-এর মতো অ্যাকশন সিনেমাগুলো বেশি করতেন এবিএম সুমন। এসব চরিত্র রুপায়ন করতে গিয়ে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে বারবার বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। এতে তিক্ত-বিরক্ত হয়েছেন হালের সম্ভাবনাময় এই অভিনেতা। এ কারণে সেন্সর কাঁচি এড়িয়ে যেতে ওটিটির জন্য রোম্যান্টিক গল্পে শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন বলে জানালেন সুমন।
এবিএম সুমন বলেন, অ্যাকশন সিনেমায় পুলিশের যেসব চরিত্র করেছি সেগুলোতে আসল পুলিশের অনেককিছু দেখানো যায় না। ডানে ঘুরে সেলুট মারো, বামে ঘুরে সেলুট মারো এসব টিপিক্যাল জিনিস দেখানো হয়। পুলিশ চরিত্রে সিগারেট খাওয়ায় সেই দৃশ্য ফেলে দিতে হয়েছে। গালি দিলে রাখা যাবে না। কেন পুলিশ কি সিগারেট খায় না? পুলিশ গালি দিয়ে শাসন করে না? প্রতিটি সিনেমায় পুলিশের ক্যারেক্টারে এসব করতে গিয়ে আমি ফ্যাডআপ! সেন্সর এগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। এসবের ফলে আসল সত্যটা দেখাতে গেলে কর্তন করতে হয়। যেটা আমি মোটেও পছন্দ করি না।
সুমন মনে করেন, গল্প ডিম্যান্ডে সিনেমাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হলে বাস্তবতা অবশ্যই দেখাতে হবে। তার ভাষ্য, পুলিশের পাশাপাশি সোসাইটির অসৎ নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতি, ক্রাইম আমরা দেখাতে পারছি না। যখন বাস্তবতা তুলে ধরতে সেন্সরে নির্দেশনা মানতে হচ্ছে, তখন সিনেমা খারাপ হলে পুরো দোষটা আমাদের ঘাড়ে আসে। সেন্সর বোর্ডের কারণে এসব কিছু হচ্ছে। ‘অন্তর্জাল’ সিনেমায় অনেক দৃশ্য ছিল যা রাখতে দেয়নি। আমি এমন কাজ আর করবো না সেখানে সেন্সর আটকাবে। যারা সেন্সর বোর্ডে আছে তাদের সিনেম্যাটিক ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে কতটা ধারণা সেটাই প্রশ্ন থেকে যায়।
কখনও সেন্সর বোর্ড নীতিমালায় পরিবর্তন এলে হয়তো আবার পুলিশ-স্পাই ক্রাইম থ্রিলার সিনেমা করবেন এবিএম সুমন। বললেন, নিয়মনীতির বেড়াজলে শিল্প হয়? সিনেমা লার্জার দ্যান লাইফ। যা সোসাইটির নিকৃষ্ট থেকে সর্বোৎকৃষ্ট দুই জায়গা প্রতিফলন ঘটাবে। যদি এসব না করা যায়, তাহলে আমাদের সিনেমা ওয়ার্ল্ড মার্কেটে টিকবে কীভাবে? সিনেমাকে শুধু নামে রাখা হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি! কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সুবিধা কতটা পাওয়া যাচ্ছে? আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, সরকার যদি সিনেমা সেক্টরের প্রতি সত্যিকারের সুদৃষ্টি দেন তাহলে সিনেমা শিল্প চেঞ্জ হতে বাধ্য।
এসব কারণে আমি ওটিটির মতো উন্মুক্ত প্লাটফর্মে কাজ করতে উৎসাহিত হয়েছেন উল্লেখ করে সুমন বলেন, ওটিটিতে সেন্সর বোর্ডের হস্তক্ষেপ নেই। তাই এই মাধ্যমেই নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছে আছে।
সুমন বলেন, এখানে যদি সেন্সর থাকতো ‘মাইনকার চিপা’, ‘মহানগর’, ‘কারাগার’র মতো কনটেন্ট নির্মিত হতো না। আরও নতুন নির্মাতারা কতো দুর্দান্ত সব গল্পে কাজ করছেন। যদি ওটিটি-তে কখনো সেন্সর দেয়া হয় তাহলে আমাদের শিল্প আজীবনের জন্য মেরে ফেলা হবে।