মাতৃভূমি নর্থ কোরিয়ার জন্য মিসাইল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী গবেষক পার্ক চুং-কোয়ান শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী দেশ সাউথ কোরিয়ায় গিয়ে হয়ে গেলেন সংসদ সদস্য বা এমপি।
বিবিসি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই সাউথ কোরিয়ায় গণতান্ত্রিক উপায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী নর্থ কোরিয়ার মেধাবী গবেষক পার্ক চুং-কোয়ান। তিনি সাউথ কোরিয়ার চতুর্থ শরণার্থী সংসদ সদস্য।
পার্ক বলেন, আমি সাউথ কোরিয়ায় শুন্য হাতে এসেছিলাম। এখন আমি দেশটির রাজনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করেছি। বিষয়টি আমি উদার গণতন্ত্রের শক্তি হিসেবে দেখি। আমি মনে করি এটি সব সম্ভব হয়েছে নাগরিকরা চেয়েছে বলেই। যা বেশ ভিন্নধর্মী ঘটনা ও আশীর্বাদ।
পার্ক জানান, তিনি দেড় দশক আগে ২৩ বছর বয়সে নর্থ কোরিয়া থেকে পালিয়ে সাউথ কোরিয়ায় এসেছিলেন। তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম নর্থ কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা বেশ দুর্নীতিগ্রস্ত ও ভুলে ভরা।
২০০৯ সালের এপ্রিলে নর্থ কোরিয়া সফলভাবে প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়।এই অস্ত্র নির্মাণের জন্য পার্ক বহু বছর ধরে পরিশ্রম করেছিলেন। গোটা দেশ ছিল ‘উৎসবের মেজাজে’। এমন সময় সুযোগ দেখে পরের দিন সকালে এই আনন্দের মাঝেই তিনি দেশ থেকে আড়ালে চলে যান।
দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া পার্কের জন্য অবশ্যই বেশ কঠিন ছিলো। সেক্ষেত্রে তিনি প্রথমে চীনে যেতে বেশ দ্রুত ও ব্যয়বহুল পথ বেছে নেন। ওই সময় দালালের দেওয়া একটি জাল পাসপোর্টও ব্যবহার করেন তিনি। এরপর সাউথ কোরিয়ায় কিছুদিন থাকার পর তিনি দেশটির পাসপোর্ট লাভ করেন।
মূলত পার্কের শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য কঠিন বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। তিনি সাউথ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পিএইচডি অর্জন করেন। তারপর দেশটির কংগ্লোমারেট হুন্দাই স্টিলে অত্যন্ত লোভনীয় চাকরি পান। দেশটির প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক দল থেকেও তিনি প্রস্তাব পান।
পার্ক জানান, তিনি কখনও রাজনীতিতে প্রবেশ করার কথা চিন্তাও করেননি। তবে যখন পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) প্রস্তাব নিয়ে আসে, তখন তিনি জনসেবা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। গত বুধবারের নির্বাচনে অনেকটা সহজেই নির্বাচিত হন পার্ক। যদিও প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের ক্ষমতাসীন দল পিপিপি ভালো ফলাফল করতে পারেনি।
কিন্তু পার্ক তার ব্যক্তিগত ইমেজের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে আছেন। এখন একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে তার বেশ বড় পরিকল্পনা রয়েছে।