বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মাথায় ভ্রমণের চিন্তা। এরপর ২০১৮ সালে বেরিয়ে পড়েন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। দিনাজপুর গিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন পুরো দেশ ঘুরে দেখার। তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে নেত্রকোনা জেলা ভ্রমণের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ করেন তিনি। বাসা থেকে যে স্বল্প পরিমান মাসিক খরচ দিতো, সেই মাসের টাকা বাঁচিয়ে ভ্রমণ করেন তিনি।
ভ্রমণ পিপাসু এই শিক্ষার্থীর নাম মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বর্তমানে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এম.ফিল/পিএইচডি এর জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি ঝালকাঠি জেলা সদরের বাসিন্দা।
ভ্রমণের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান। প্রথম জেলা ভ্রমণেই টাকার স্বল্পতায় ৫ বেলা না খেয়ে এবং রেলস্টেশনে রাত কাটিয়েছেন তিনি। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ভ্রমণ শুরু এবং ২০২২ সালের শেষের দিকে নেত্রকোনা জেলা ভ্রমণের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ করেন তিনি।
দীর্ঘ এ যাত্রার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে পরিগণিত। বিভিন্ন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানুষের আচার-আচরণ, বিভিন্ন জেলার মানুষের বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি জানতে ও শিখতে আমি সবসময় উৎসুক। আমি পুরো দেশকে জানতে চেয়েছিলাম, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় যেতে চাচ্ছিলাম। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত-শত পুরাতন ঐতিহাসিক স্থাপনা। এগুলো দেখাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য।
এই ভ্রমণ পিপাসুর কাছে সৌন্দর্যের দিক থেকে বান্দরবান একটি স্বপ্নের মতো জায়গা। আমিয়াখুম ও নাফাখুম ঝর্ণায় যাওয়াটা তার আজীবন মনে থাকবে। তার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় পাহাড় (সরকারিভাবে) তাজিংডং বিজয় করাটা এখনও তার স্মৃতির মানসপটে ভাসে বলে জানান মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ। বান্দরবানের পরে মৌলভীবাজার ভালো লেগেছে তার কাছে। এ জেলায় প্রবেশ করা মাত্রই চা -এর ঘ্রানে বিমোহিত হয়েছিলেন তিনি। তার পাশাপাশি মৌলভিবাজারের হামহাম জলপ্রপাত এখনও তার চোখে ভাসে। মৌলভীবাজারের পরে ভালো লেগেছে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত্রিটা। তারপরে ভালো লেগেছে ‘মেঘের বাড়ি’ রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। ভালো লেগেছে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনও।
ভ্রমণ খরচের বিষয়ে মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ বলেন, বাসা থেকে যে স্বল্প পরিমান মাসিক খরচ দিতো, সেই মাসের টাকা বাঁচিয়ে ভ্রমণ করি। বাসা থেকে কোনদিন টাকা নেইনি। মাসে স্বল্প পরিমান যে হাতখরচ দিতো, সেটা একটু একটু জমিয়ে ২/৩ মাস অন্তর অন্তর ট্যুর করতাম। যখন ৬৪ জেলা সম্পন্ন করেছি, তখন পরিবার বিষয়টি জেনেছে। আর বন্ধুরা ও বড় ভাইয়েরা সবসময় উৎসাহ দিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে এমনও আছে, যাদের নিকট থেকে আমি ধার করেছি, তারা না হলে আমার জন্য অসম্ভব হয়ে যেতো এই জার্নিটা।
ভ্রমণের এই তীব্র ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়াতুল্লাহ বলেন, আমি আমার সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশকে জানতে চেয়েছিলাম, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আরো গভীরভাবে জানতে চেয়েছিলাম, দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিলাম। কারণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এই সব কিছু মিলিয়েই আমার ৬৪ জেলা ভ্রমণের আগ্রহ জন্মেছিল।