ক্রিকেটে একটা সময় একক আধিপত্য দেখিয়ে ওয়ানডেতে দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত দলটি যেন সোনালী যুগ ফেলে এসেছে। ধারাবাহিকতার অভাব এবার তাদের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকেই বিদায়ের তিক্ত স্বাদ দিল। আগামী অক্টোবরে হতে চলা ওয়ানডে বিশ্বকাপে ক্যারিবীয়দের দেখা যাবে না।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইয়ে সুপার সিক্স পর্বের ম্যাচে আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটের পরাজয়ে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ শেষ হয়ে গেছে শাই হোপের দলের। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবীয়রা ৪৩.৫ ওভারে ১৮১ রানে অলআউট হয়। জবাবে স্কটল্যান্ড ৩৯ বল হাতে রেখে ৩ উইকেট হারিয়ে সেরা একটি জয় তুলে নেয়।
টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র সুপার সিক্সে যাওয়া দলগুলোর বিপক্ষে গ্রুপপর্বে পাওয়া পয়েন্টগুলো সুপার-পর্বে গণনায় ধরা হচ্ছে। গ্রুপ ‘এ’তে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের সঙ্গে সুপার সিক্সে ওঠা জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে গিয়েছিল। ফলে তাদের পকেটে ছিল না কোনো পয়েন্ট। সুপার সিক্সে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটিশদের কাছে পরাজিত হওয়ায় দুই ম্যাচ হাতে থাকতেই উইন্ডিজের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে গেল।
শ্রীলঙ্কা সুপার সিক্স টেবিলের শীর্ষে, তাদের পয়েন্ট ৬। জিম্বাবুয়ে সমান ৬ পয়েন্ট পেলেও রানরেটে পিছিয়ে দুইয়ে আছে। ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ওমানকে হারানোয় ২ পয়েন্ট নিয়ে সুপার সিক্সে ওঠে স্কটল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এখন তারা টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চার নম্বরে আছে ২ পয়েন্ট পাওয়া নেদারল্যান্ডস। পয়েন্ট না পেলেও রানরেটের বিচারে বাদ পড়া দুই দল উইন্ডিজ পঞ্চম এবং ওমান ষষ্ঠ স্থানে আছে।
শনিবার হারারেতে ইনিংসের শুরুতেই উইন্ডিজ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। ৩০ রান জমা করতে হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। কোনো রান না করেই ব্রেন্ডন ম্যাকমুলেনের বলে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার জনসন চার্লস। তিনে নামা শামারাহ ব্রুকসও রানের খাতা না খুলে ম্যাকমুলেনের শিকার হন।
ম্যাকমুলেনের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ৫ চারে ২২ রান করা ওপেনার ব্রেন্ডন কিং। মাত্র ৫ রান করে ক্রিস সোলের বলে বোল্ড হন কাইল মেয়ার্স।
পঞ্চম উইকেটে শাই হোপ এবং নিকোলাস পুরান ৩০ রানের জুটি গড়ার পর আবারও ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাফিয়ান শরীফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৩ রান করা হোপ।
৪৩ বলে ২ চারে ২১ রান করে মার্ক ওয়াটের বলে ক্রিস্টোফার ম্যাকব্রাইডের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন পুরান। বোর্ডে ৮১ রান জমা করতেই ৬ উইকেট খুঁইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সপ্তম উইকেটে রোমারিও শেফার্ডকে নিয়ে ৭৭ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দিয়েছিলেন জেসন হোল্ডার। ৪৩ বলে ৫ চারে ৩৬ রান করা শেফার্ডের বিদায়ে জুটি ভাঙার পর আবারও নামে ধস। আর মাত্র ২৩ রান যোগ করতেই শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে বসে উইন্ডিজ। ১৮১ রানে তাদের ইনিংস থামে।
স্কটিশদের পক্ষে ম্যাকমুলেন ৩২ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট দখল করেন সোল, ওয়াট ও ক্রিস গ্রিভস।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বোর্ডে রান যোগ করার আগেই উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। হোল্ডারের করা ইনিংসের প্রথম বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ক্রিস্টোফার ম্যাকব্রাইড।
উইকেটরক্ষক ব্যাটার ম্যাথু ক্রস ও বল হাতে ঝলসে ওঠার পর তিনে ব্যাট করতে নামা ম্যাকমুলেনের দ্বিতীয় উইকেটে ১২৫ রানের জুটিতে দলকে জয়ের কক্ষপথে রাখেন। ম্যাকমুলেন ১০৬ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৬৯ রান করে আলঝারি জোসেফের হাতে ধরা পড়েন।
জর্জ মুন্সে ১৮ রান করে আকিল হোসেনের বলে চার্লসের হাতে ধরা পড়লেও স্কটল্যান্ডের স্মরণীয় জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন স্কট। তিনি ১০৭ বলে ৭ চারে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন। সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন ১৪ বলে ২ চারে ১৩ রান করা অধিনায়ক রিচি বেরিংটন।
উইন্ডিজের পক্ষে একটি করে উইকেট পান শেফার্ড, হোল্ডার ও আকিল।