ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে দুবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। গত এক দশকে সেই দলটারই মাঠের খেলায় ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সুপার সিক্স পর্বে স্কটল্যান্ডের কাছে সবশেষ হারে তাদের জুটেছে বড় হতাশা। অক্টোবরে ভারতে হতে চলা ওয়ানডে বিশ্বকাপে ক্লাইভ লয়েড, স্যার গ্যারি সোবার্স, স্যার ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারাদের উত্তরসূরিদের দেখা যাবে না।
দলের এমন পরিস্থিতি একেবারেই বিশ্বাস করতে পারছেন না সাবেক ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ। ধারাভাষ্যকার হিসেবে জিম্বাবুয়েতে বসে দেখেছেন শাই হোপদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স। বিশ্বব্যাপী উইন্ডিজের ভক্তরা কতটা মর্মাহত সেটিও উপলব্ধি করছেন।
ভীষণভাবে আঘাত পাওয়া বিশপ গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বলেছেন, বিশ্বকাপে দলটির খেলতে না পারা তার কাছে রীতিমতো অকল্পনীয় ব্যাপার। বিপর্যয় সামাল দিয়ে দল পরিচালনায় দেখতে চান পরিকল্পনা। খেলোয়াড়দের পুল নিয়েও ভাবনা তুলে ধরেছেন।
‘এটা কঠিন একটি দিন। মেনে নেয়াটা ভীষণ কঠিন। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অংশ নিতে না পারাটা আমার কাছে অকল্পনীয়। অনেক ভক্ত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সমর্থকদের আবেগ অনুভূতির প্রতিধ্বনি শুনছি। যাদের মধ্যে এখানেও অনেকে আছেন।’
২০২১ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পর চলতি বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট কাটতে ব্যর্থ উইন্ডিজ। ক্যারিবীয় সাবেক বললেন অপ্রিয় সত্য কথাটাই, ‘দলের ক্রিকেট এই মুহূর্তে কোথায় রয়েছে, তার একটি শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতা বোঝা গেল। সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে শুধুমাত্র খেলা নয়, তাদের কয়েকটি দেশ ধরাশায়ী করছে। অবিলম্বে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অনেক কাজ করতে হবে। খেলোয়াড়দের প্রতিভার যে স্তর আছে, সেটি দলের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য বলেই জানি। নিজেদের প্রমাণ করাটা বড় প্রয়োজন।’
ভারতে হওয়া ২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজ। পরে আইসিসির কোনো ইভেন্টেই ভালো করতে পারেনি তারা। ক্রিকেটের ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত একসময়ের পরাশক্তির এমন পরিণতি, প্রত্যাশিত ছিল বলেই দাবি বিশপের।
‘হ্যাঁ, ধীরে ধীরে পারফরম্যান্স নিচে নেমেছে। সবসময় বলেছি, এই খেলোয়াড়দের এই দলটির এমন ফলাফলের পূর্বাভাস ছিল। আমরা সম্ভবত একদশক ধরে বড় দেশগুলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ওয়ানডেতে ভালো ক্রিকেট খেলিনি। টি-টুয়েন্টি দল দুবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও পিছিয়ে গেছে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজই বর্তমানে একমাত্র আন্তর্জাতিক দল, যারা বেশ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত। অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেটে এমন আরেকটি দল ছিল, যার নাম ছিল পূর্ব আফ্রিকা। সেই দলটি আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের চারটি দেশ নিয়ে গড়া হয়েছিল। সেই দলটি ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কালের বিবর্তনে হয়েছে বিলুপ্ত।
বিশপ অবশ্য বলছেন, ক্যারিবীয় অঞ্চলে কিছু আত্মদর্শন হয়েছে। তাই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে হাতে হাত মেলাতে হবে।
উইন্ডিজ ক্রিকেটে একত্রিত হওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তা মেনে নিচ্ছেন সাবেক এ ক্রিকেটার। বললেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলার সাথে সাথে ক্রিকেটের মানদণ্ড এখন খুব কঠিন। আপনার সম্পদের উপর টান থাকবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ নয়। আমার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর নেই। আপনাকে আরও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রতিভা বের করে তা সংগ্রহ করা ও তার বিকাশ লাগবে। কারণ এটি মানদণ্ডের একটি চ্যালেঞ্জ।’
তরুণ খেলোয়াড়দের বহুজাতিক ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার সময় নিবেদন ও তাদের ক্রিকেট ইতিহাস সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নও ছিল বিশপের দিকে। তিনি কাউকে দোষারোপ না করে যুগের পরিবর্তনকে সামনে টেনে এনেছেন।
‘আমি মনে করি এখন সময় বদলেছে। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স এবং ক্লাইভ লয়েডকে যা অনুপ্রাণিত করেছিল, বিশ্বায়ন তা প্রায় নষ্ট করে দিয়েছে। তাই অনুপ্রেরণার ধরন এখন ভিন্ন এবং আমি তা মেনে নিয়েছি। যদি এটা আর্থিক বিষয় হয়, তবে আমাদের সেই সময়ের বাস্তবতার সঙ্গে যেতে হবে।’
‘বলব না যে ’৬০ ও ’৭০-এর দশকের খেলোয়াড়দের স্পষ্ট অনুভূতি ছিল, তা ২০০০-এর দশকে একই হওয়া উচিত। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে তাদের অগণিত আকাঙ্ক্ষাগুলো কী। অনুভূতিগুলো প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য আলাদা হবে। কেবল সেই ইচ্ছাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ আমি খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেছি, জেনেছি, এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তাদের খেলার ইচ্ছা আছে। কিন্তু ততটা নেই যেমনটা অতীতে ছিল।’
‘বিশ্বজুড়ে ক্যারিবিয়ান পরিচয়ে ক্রিকেটের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। তাই এটি যেমন গুরুতর, এটি শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্যসেবা নয়, তবে এটির একটি ভূমিকা রয়েছে এবং সঠিকভাবে পেতে আমাদের সত্যিই একটি প্রভাব থাকা দরকার।’