সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপির রোড মার্চ কর্মসূচি থেকে সাংস্কৃতিক উৎসবে হামলাকে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তালেবানি সংস্কৃতিকে সামনে আনার জন্য এই হামলা বলে মনে করছেন তারা। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিএনপির মিছিল থেকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সারদা স্মৃতি ভবনে অনুষ্ঠিত নাট্যোৎসবে হামলা হয়। এতে অন্তত ১০ জন নাট্যকর্মী আহত হন।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মোসতাক আহমদ জানান, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের ৪০ বছরে পদার্পন উপলক্ষ্যে এবং বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনার দিন ছিল। এই উৎসবের মাধ্যমেই ১০ বছর বন্ধ থাকার পর সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সারদা হল। এর জন্য তিন দিনব্যাপী নাট্যউৎসবের মহড়ায় ব্যস্ত ছিলেন নাট্যকর্মী, নৃত্যশিল্পী এবং সঙ্গীতশিল্পীরা।
এসময় সারদা হলের পাশের মহড়া কক্ষে কয়েকজন যুবক জোর করে ঢুকে পড়েন। সংস্কৃতিকর্মীরা তাদেরকে সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করে। উল্টো তারা নারী সংস্কৃতিকর্মীদেরকে ইভটিজিং এবং কটুক্তি করতে থাকেন। এসময় জ্যেষ্ঠ সংস্কৃতিকর্মীরা নম্রভাবে তাদেরকে চলে যেতে বললেও তারা বাজে আচরণ করে।
একপর্যায়ে তারা বের হয়ে গিয়ে শতাধিক লোকজন নিয়ে ফিরে এসে হামলা চালায়। তাদের গায়ে ছিল বিএনপির রোডমার্চের টি-শার্ট।

হামলায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের বর্তমান সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, নাট্যজন হুমায়ুন কবির জুয়েল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক বিভাষ শ্যাম যাদনসহ ১০ জন সংস্কৃতিকর্মী আহত হন।
হামলার ২০ মিনিট পর সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ এবং সিলেট সিটি মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে যে আক্রমণ চলে আসছে, এই হামলাকে ওই কার্যক্রমেরই অংশ বলে মনে করেন মোসতাক আহমদ।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় সারদা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। হামলাকারীদেরকে গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট।
তালেবানি সংস্কৃতিকে সামনে আনার জন্য এই হামলা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা। যারা ওই সংস্কৃতি ধারণ করে তারাই মুক্তমনা নাট্যচর্চা চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, যারা তালেবানি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারাই নাট্যকর্মীদের ওপর আঘাত করে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই পক্ষ যেন কোন সুযোগ নিতে না পারে, তার জন্য সতর্ক থাকতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন হামলার ঘটনা আরও সামনে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংবাদ সংস্থা এপি-র ব্যুরোপ্রধান জুলহাজ আলম। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলেন তিনি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীরা এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
বিজ্ঞাপন