প্রায় তিন বছর আগে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির নারকীয় হত্যার ঘটনায় ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
পুরান ঢাকার আদালত পাড়ার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান বুধবার বহুল আলোচিত ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এই মামলার আরেক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৭ জঙ্গি
অপরাধ প্রমাণিত হওয়া আদালত জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নির্দেশ দিয়েছেন।
রায় ঘোষণার সময় তারা সবাই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ছিলেন। আজ আদালত রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও এদিন আদালত কক্ষে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।
কঠোর নিরাপত্তা
তিন বছর আগেও ওই ঘটনার রায়ের আগে পুরান ঢাকার আদালত এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রায়কে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়।
প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাব-পুলিশের ব্যাপক সংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থান নেয়। তাদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করে। সকালে বহিরাগতদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেয়া হয়। আদালতের প্রবেশপথে প্রত্যেককে তল্লাশির পর ভেতরে ঢোকানো হয়।
সেদিন যা ঘটে ছিল
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের পাশে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। পরে রাতেই ওখানে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাউদ্দিন খান নিহত হন। এছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩১ সদস্য ও র্যাব-১ এর তৎকালীন পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদসহ ৪১ জন আহত হন।
পরদিন ২ জুলাই ভোরে সেনা কমান্ডোদের পরিচালিত ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। এরপর পুলিশ সেখান থেকে ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও একজন রেস্তোরাঁকর্মী। আর কমান্ডো অভিযানের আগে ও পরে ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
মামলা
দেশের মানুষকে হতবাক করে দেয়া নজিরহীন সেই হামলার তিন দিন পর গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস সন্ত্রাস দমন আইনে গুলশান থানায় মামলা করেন। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির দুই বছর তদন্ত করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বিচারকাজ
সেই হামলায় জড়িত মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও জীবিত ৮ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। এদের মধ্যে শরিফুল ও মামুনুর বাদে অন্য ৬ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বহুল আলোচিত এ মামলার বিচার শুরু হয়।
এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ, আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিদের বক্তব্য উপস্থাপন এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। সে অনুযায়ী আজ রায় ঘোষণা করেন আদালত।