চাইলেই টাকা পান, যা দিয়ে পছন্দমতো খেলোয়াড় কিনে প্রত্যেক দলবদল মৌসুমেই বাজার গরম করে রাখেন পেপ গার্দিওলা। কিন্তু এতসব খেলোয়াড় কিনে ম্যানচেস্টার সিটিকে কী দিতে পারলেন তিনি, শনিবারের ম্যাচের পর ফের উঠতে শুরু করেছে এমন প্রশ্ন!
প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। ফরাসি ক্লাব লিওঁর কাছে ৩-১ গোলে হেরে যাওয়ার পর গার্দিওলার দুহাত ভরে অর্থ খরচ করা আর বিনিময়ে ম্যানসিটিকে চার বছরে একবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে তুলতে না পারার পর সমালোচনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সিটিজেনদের দায়িত্বের এ চার বছরে ৭৭৮ মিলিয়ন ইউরো তবে কাদের পেছনে ঢেলেছেন বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক কোচ?
২০০৮ সালে আবুধাবি স্পোর্টস গ্রুপের হাত ধরে বদলে যাওয়া শুরু ম্যানসিটির। পরে পেট্রোল বিক্রির কাড়িকাড়ি অর্থে দামি খেলোয়াড় আর নামকরা কোচ দলে টেনে শিরোপা কেনার কম চেষ্টা করেনি ক্লাবটির ধনকুবের আরব মালিকরা। লাভ একদমই হয়নি তাও নয়, মালিকানা বদলের পর শহরের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসির আধিপত্য ভেঙে চারবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে সিটিজেনরা।
কিন্তু লিগ শিরোপা ধরে আর কয়দিন! সিটির বিলিয়নিয়ার মালিকেরা চোখ দিয়ে বসে আছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিটার দিকে। ইতিহাসে জায়গা করে নিতে যে ইউরোপ সেরা হতে হবে কথাটা ভালোই বুঝতে পেরেছেন আবুধাবির আমিররা।
পরিবর্তনটা তাই এলো কোচের দিক থেকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে যে আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের শিক্ষা থাকা প্রয়োজন, সে ভাবনা থেকেই ২০১৬ সালে ম্যানসিটির কোচ করে আনা গার্দিওলাকে। তখন প্রথমবারের মতো দলকে সেমিতে তুলেও ছাঁটাই হন কোচ ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি।
বার্সেলোনা ও বায়ার্নের কোচ থাকাকালে প্রতিবার দলকে সেমিতে তোলা গার্দিওলার প্রতি বেশ আস্থা ম্যানসিটি মালিকদের। অর্থের অভাবে খেলোয়াড় কিনতে না পারায় দল ভালো করেনি এমন প্রশ্ন যেন না ওঠে তাই প্রতি দলবদলেই কোচকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছে দলটি।
গার্দিওলাও মন ভরে ‘শপিং’ করেছেন প্রতি মৌসুমে। যখন যে পজিশনে খেলোয়াড় প্রয়োজন পড়েছে, যত অর্থই লাগুক ঠিকই কিনে এনেছেন কাউকে। এই করতে করতে বেলা গড়িয়েছে চার বছর, দলবদলে খরচ হয়ে গেছে ৭৭৮ মিলিয়ন ইউরো! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা এমন অনেক ক্লাব আছে যারা শেষ ৩০ বছরেও খেলোয়াড়দের এত বেতন দেয়নি, দলবদল তো দূরের কথা!
এত খরচ করে গার্দিওলার অর্জন? টানা দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন। ২০১৯ সালে জিতেছেন ঘরোয়া লিগের ট্রেবলও। কিন্তু যেজন্য তাকে কোচ করে আনা তাতে অর্জন একদম লবডঙ্কা।
প্রথম মৌসুমে গার্দিওলার দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়েছে মোনাকোর কাছে হেরে। পরের দু-মৌসুমে কোয়ার্টারে প্রিমিয়ার লিগের দুই শত্রু লিভারপুল আর টটেনহ্যামের কাছে হেরে বাদ। এবার লিওঁর কাছে হেরে একই অবস্থা। যেখানে গার্দিওলার কৌশল দিয়ে ম্যানসিটি ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে তিনিই কিনা দলকে সেমিতে তুলতে পারেননি।
এর মাঝেই খবর, নতুন মৌসুমের জন্য আবারও পকেট ভর্তি করে খেলোয়াড় কেনার মিশনে নেমে পড়বেন গার্দিওলা। করোনা মহামারী অন্যদলগুলোর আর্থিক সামর্থ্যের ১২টা বাজিয়ে দিলেও কোচের সাধপূরণে কোনো খামতি রাখছে না ম্যানসিটি।
উয়েফার দেয়া দুবছরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরও ক্লাবটির অর্থ ঢালতে কোনো ভীতি নেই। তবে শনিবার আরেকটি হতাশার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিশন শেষে গার্দিওলার কথা শোনার মতো ধৈর্য ম্যানসিটির মালিকদের থাকে কিনা সেটা এখন যা দেখার।