আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কোনোভাবেই ৫৫ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২০ প্রদানকালে তিনি এ তথ্য জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই কারণে এবার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। সংকট দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সহযোগিতায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। ৩ দিন আগে থেকেই পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীদের লাভ, আমদানিকারকদের কমিশনসহ সব খরচ যোগ করে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ভোক্তা পর্যায়ে কোনোভাবেই ৫৫ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
আলু ও পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশের মত ভারতেও বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি হয়। এই ঘাটতি দেখা দেয় সেপ্টেম্বরে। যার ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা হয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। কিন্তু এখন ভারতেও পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আজকে কলকাতার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৭ রুপি, অর্থাৎ বাংলাদেশি ৫৫ টাকায়। তার মানে আলু পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশেও বেড়েছে ভারতেও বেড়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, দেশের বাজারে ভারতের পেঁয়াজের নির্ভরতা বেড়েছে। এখন তাদের সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে ভারত আগে থেকে আমাদের কিছু বলেনি, হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরের সংকট থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। তাই এবার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়ায় তেমন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বলছি আমদানি পেঁয়াজ ৫৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। এখন আপনাদের অনুসন্ধান করতে হবে এটা আসলেই সঠিক দাম কি-না। আপনাদের সেই তথ্যই আগামী দিনের বাজার শিথিলতায় কাজ করবে।
তৈরি পোশাক খাত আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খাতের সঙ্গে আমিও জড়িত। এক সময় বিজিএমইএর সভাপতি ছিলাম। এই খাতটি সম্পর্কে আমি জানি। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ায় মহামারির মধ্যেও এ খাতটি এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে আগের অবস্থানে চলে এসেছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণের সময় প্রণোদনা, সহযোগিতা-সহায়তা যদি না দেয়া হতো তাহলে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় এই খাতকে উদ্যোক্তারা সামাল দিতে পারতেন না।
টিপু মুনশি বলেন, সত্যিকার অর্থে দেশ অনেক এগিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বের সব সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিবেশী অন্য সব দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। তবে আমরা একেবারেই বিপদমুক্ত না, কিছুটা হয়তো ঝুঁকিও রয়েছে।
ইআরএফ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২০ এ প্রিন্ট মিডিয়ায় ৯ ক্যাটাগরিতে ৯ জন এবং টেলিভিশনের ৬ ক্যাটাগরিতে ৬ জনসহ মোট ১৫ জন প্রতিবেদককে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। বিজয়ীদের ক্রেস্ট, সম্মাননাসহ নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী সাংবাদিকদের হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও চেক তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কে ফয়সাল বিন সিরাজ, রয়টার্সের সাবেক বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ সিরাজুল ইসলাম কাদির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।