সারাবিশ্বে যখন সাইবার হামলার ঘটনায় তোলপাড় চলছে তখন জানা গেল, দেশের ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রযুক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে খুবই অজ্ঞ। অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাই প্রযুক্তি নিরাপত্তার ধারণার বাইরে। দেশের সরকারি-বেসরকারি ২১টি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপর উপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।
রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএমের অডিটরিয়ামে মঙ্গলবার দুপুরে ‘আইটি সিকিউরিটি ইন ব্যাংক’ শীর্ষক কর্মশালায় জরিপের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়। জরিপের প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে দেশের ব্যাংকগুলোতে কর্মরত ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাই জানে না। যার মধ্যে ২৮ শতাংশের অবস্থা একেবারে তলানিতে। ২২ শতাংশের মোটামুটি জ্ঞান রয়েছে। আর সামান্য ধারণা রয়েছে ২০ শতাংশ কর্মকর্তার।
তবে প্রযুক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা ৪ শতাংশের, ভালো ধারণা ১০ শতাংশের এবং মোটামুটি ধারণা ১৬ শতাংশ কর্মকর্তার রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
দেশের ২১টি ব্যাংকের উপর এই জরিপ চালায় বিআইবিএম, যার মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৪ টি, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ৩টি এবং বিদেশি ব্যাংক ৩ টি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৭টি তফসিলি ব্যাংকে প্রায় ২ লাখ কর্মকর্তা রয়েছেন।
শুধু কর্মকর্তা নন, গ্রাহকদের মধ্যেও একই জরিপ চালিয়েছে বিআইবিএম। এতে দেখা গেছে, ৫৪ শতাংশ গ্রাহক সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে অজ্ঞ। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ৯০ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতের তথ্য নিরাপত্তা বাধায় আরও কিছু কারণ রয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে- নতুন প্রযু্ক্তি সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অজ্ঞতার অভাব।
এর আগে গত ৪ মে বিআইবিএমের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মো. শিহাব উদ্দিন খান ‘আইটি অপারেশন অব ব্যাংক’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের ৫২ শতাংশ ব্যাংক। এরমধ্যে ভয়াবহ মাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে ১৬ শতাংশ, আর ৩৬ শতাংশ রয়েছে উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। বিদেশি সফটওয়ার ব্যবহার, দক্ষ জনশক্তির অভাব ও কর্মকর্তাদের অসৎ উদ্দেশ্যই এসব ঝুঁকির জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন তিনি।
শিহাব উদ্দিন খানের ‘আইটি অপারেশন অব ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক সাইবার হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও এ হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ সাইবার হামলা রোধে ব্যাংকগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংকে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কারণ এসব ব্যাংকের তথ্য যেকোনও সময় চুরি হতে পারে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে এখনও অনেক ব্যাংক তা মানছে না। আগামীতে রিভিউ গাইডলাইন দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাইবার হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈশ্বিক সাইবার হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও এ হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ সাইবার হামলা রোধে ব্যাংকগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংকে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেভাবে বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলা হচ্ছে তাতে যে কোনও সময় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বিমানবন্দর, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সব শিল্প প্রতিষ্ঠানই ঝুঁকিপূর্ণ। এখাতে বাজেটে বরাদ্দও কম। প্রযুক্তি বিষয়ে আরো বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তারা।
সম্প্রতি সাইবার হামলায় অন্তত ১৫০টি দেশ আক্রান্ত হয়। এ হামলার প্রভাবে বাংলাদেশেও ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ৩০-৪০টি পার্সোনাল কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট বলছে, বিভিন্ন দেশের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা।
বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাজডাক টেকনোলজির প্রধান নির্বাহী মি. নাজ আহমেদ ও বিআইবিএম’র সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পূবালী ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেব দুলাল রায় প্রমুখ।