৫০ বছর ধরে ভারতের উড়িষ্যার দরিদ্রদের চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য কাজ করেছেন স্পেনের বৃদ্ধা এনেডিনা কসটিলা। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি মানবতাপ্রেমী এই নারীর। ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে ১০ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছিল তাকে, তিনি চলেও গেছেন নিজ দেশে।
১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট উড়িষ্যার প্রত্যন্ত অঞ্চল আলিগান্দায় আসেন এনেডিনা। এখনো এই এলাকায় ভাঙা-চোরা রাস্তা, দুর্বল মোবাইল নেটওয়ার্কসহ আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি। এখানকার মানুষকে পাইপলাইনের পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয় এখনো।
কিন্তু দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে আলিগান্দায় বসবাস শুরু করেন মঠবাসিনী এনেডিনা। সেখানে তিনি একটি চিকিৎসাকেন্দ্র (ডিসপেনসারি) স্থাপন করেন। চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি দরিদ্রদের বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয় এখান থেকে। এর পাশাপাশি চারটি স্কুলও আছে এখানে। এসব স্কুলে বিনাবেতনে স্থানীয়দের পড়াশোনা চলে।
অবশ্য তিনি ভারতে আসেন ১৯৬৬ সালে। বিরামপুরের গনজাম জেলায় ছিলেন তিনি। সেখানে থাকা অবস্থায় উড়িষ্যার ভাষা আয়ত্ত করেন তিনি। এরপর চলে যান আলিগান্দায়।
তবে কিসের টানে তিনি আলিগান্দার মতো অজপাড়াগায়ে আসেন, তা কেউ জানেন না। কেউ কেউ মনে করেন তিনি বক্ষব্যাধির(টিবি) চিকিৎসায় পারদর্শী ছিলেন বলে এখানে আসেন। কারণ এই অঞ্চলের মানুষের টিবির সমস্যা ছিল। অনেকে মনে করেন এটা তাদের সৌভাগ্য যে ‘‘তাদের রক্ষাকারী” এখানে এসেছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করে এনেডিনার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। গত ১৮ আগস্ট কাউকে কিছু না বলে স্পেনে চলে যান ৮০ বছর বয়সী এনেডিনা। তার বিদায় মুহূর্ত ছিল খুব সংক্ষেপ। কোনও ফোন নাম্বার বা ঠিকানা না দিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি। তার স্মৃতি এখন শুধু স্থানীয়দের কাছে তাকে প্রিয় করে রেখেছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, এনেডিনার বিদায়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তার চিকিৎসাকেন্দ্রে। লোকজন সেখানে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নার্স এলিজাবেথ সোরেং। তিনি বলেন, এনেডিনা প্রত্যেক রোগীর নাম জানতেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এডওয়ার্ড মন্ট্রি বলেন, ১৯৭১ সালে এনেডিনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। শুরুর দিকে তাকে আমরা ‘মা’ এবং ‘আম্মা’ বলতাম। তবে পরে আমরা তাকে সিস্টার বলে ডাকা শুরু করি। সাদা এবং নেভিব্লু পোষাক পরিহিত এনেডিনা খুব কম সময়ের মধ্যে সবার কাছে প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেন।
এনেডিনা যে শুধু এই ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন তা নয়। তিনি মেয়েদের জন্য দুটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে পাঁচ শতাধিক মেয়ে পড়াশোনা করে। ঝরে পড়া মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করতেন তিনি। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্যও কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
এনেডিনার চলে যাওয়ার পর তার কাজ চলমান রাখার কথা বলছেন সহকর্মীরা। রোগীদের সন্তুষ্ট করে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিতে তারা এনেডিনার মতো অন্য কাউকে খুঁজছেন।
তবে গ্রামবাসীরা বলছেন, এনেডিনার শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবে না। গ্রামের পর গ্রাম তার ভালোবাসার ছোয়ার কথা বলে যাচ্ছে। শিক্ষক এডওয়ার্ড মন্ট্রি বলেন, উড়িষ্যা মতো একটা রাজ্যে প্রায় ৪৮ বছর স্বার্থ ছাড়া কাজ করে একজন মানুষের এভাবে চলে যাওয়া লজ্জার বিষয়।
সরকার কোন বিদেশির ভিসা প্রত্যাখান বা বাতিল করার অধিকার রাখে। কিন্তু এমন সময় এনেডিনার ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হলো যখন তার মতই আরেকজন মানবপ্রেমী মাদার টেরেসার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে ভারতে। আর আলিগান্দার বিভিন্ন চার্চে, স্কুলে, চিকিৎসাকেন্দ্রে শুন্যতা অনুভব করা শুরু হয়েছে এনেডিনাকে।