প্রত্নতাত্ত্বিকরা পেরুতে খুঁজে পেয়েছেন বলি বা উৎসর্গ করা শিশুদের বিশাল এক গণকবর। ধারণা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের শিশুবলির ঘটনার নিদর্শন এটি।
বিবিসি জানিয়েছে, পেরুর উত্তরের উপকূল এলাকায় প্রায় সাড়ে ৫শ’ বছর আগে মোটামুটি একই সময়ে ১৪০টিরও বেশি শিশুকে বলি দেয়া হয়। সম্প্রতি এমনই একটি গণকবর আবিষ্কার হয়েছে।
বর্তমান সময়ের ত্রুজিল্লো’র কাছে আবিষ্কার হয়েছে দেহাবশেষগুলো। এক সময় এই এলাকা প্রাচীন চিমু সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
মানবশিশু ছাড়াও তাদের সঙ্গে দুই শতাধিক লামা শাবকের দেহাবশেষ সেই গণকবরে পাওয়া গেছে। লামাগুলোকে মানবশিশুদের সঙ্গেই উৎসর্গ করা হয়েছিল বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অর্থ সহযোগিতায় পরিচালিত এই খনন প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইটে।
২০১১ সালে হুয়ানচাকুইতো-লাস লামাস নামে পরিচিত এলাকাটিতে সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো একটি মন্দির খননকালে প্রথম ৪০ জন মানুষ এবং ৭৪টি লামার দেহাবশেষ খুঁজে পান প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা। প্রাথমিক পরীক্ষাতেই তারা বুঝতে পেরেছিলেন, মৃত্যুগুলো বলির মাধ্যমে হয়েছে।
সেই থেকে চলছিল খনন। একে একে বেরিয়ে আসে আরও অনেকগুলো মরদেহ। এভাবে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত মোট ১৪০ জন মানুষের মৃতদেহ পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে খননকাজ ও গবেষণায় নিয়োজিত দলটি।
লাশগুলো ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের। তবে বেশিরভাগেরই বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে বলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
দেহাবশেষগুলোর হাড় কাটা দেখে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে শিশুগুলো নরবলির শিকার হয়েছে। তাদের স্টারনামের মাঝেও (পাঁজরের মাঝখানে ওপরের হাড়) কাটা রয়েছে। এমনকি বেশ কিছু মরদেহের পাঁজরের হাড় ভাঙা, যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের পাঁজর ভেঙে হৃদপিণ্ড বের করে নেয়া হয়েছিল।
বেশ কয়েকটি মৃতদেহে সিঁদুরের মতো উজ্জ্বল লাল রঙের পদার্থের নমুনা পাওয়া গেছে। এগুলো বলি অনুষ্ঠানের অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া সেখানে পাওয়া লামা শাবকগুলোর কোনোটির বয়সই ১৮ মাসের বেশি নয়। সেগুলোকে পূর্বদিকে আন্দেজ পর্বতমালার দিকে মুখ করে কবর দেয়া হয়েছিল।
গণকবরের ব্যাপকতা প্রসঙ্গে প্রকল্পটির অন্যতম গবেষক জন ভেরানো বলেন, ‘আমি অন্তত এত বিশাল কিছু আশা করিনি। অন্যরা কেউ ধারণা করেছিল বলেও আমার মনে হয় না।’
পেরুর এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবেই শুষ্ক। কিন্তু দেহাবশেষগুলোর সঙ্গে কাদামাটির ভারী একটি স্তর পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময়টিতে ‘এল নিনো’র মতো চরম বৈরি আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছিল অঞ্চলটিতে। যার ফলে ভয়াবহ বৃষ্টিপাত ও বন্যা দেখা দিয়েছিল।
খননের সময় মাটির এই স্তর পরীক্ষা করে গবেষকরা মনে করছেন, এই তীব্র প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পেতে এত বড় মাপের বলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।