৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস ছড়ায়‘ বলে যে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে তা পুরোপুরি ভ্রান্ত ও গুজব বলে নিন্দা করেছেন গবেষকরা।
বিবিসি বলছে, গত কয়েক দিনে যুক্তরাজ্যের সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, ৫জি নেটওয়ার্ক করোনা ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে।এরপর অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে থাকে- করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যার যার এলাকার ৫জি টাওয়ার গুঁড়িয়ে দাও। এসব টাওয়ার থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। এরপর এমন অদ্ভূত ধারণা বিশ্বাস করে বার্মিংহামের ওই ৫জি টাওয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয়রা।
মহামারী করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে এমন বহু গুজব। এই রোগের সঠিক কারণ ও প্রতিষেধক না থাকায় মানুষের মাঝে নানা ষড়যন্ত্র ও গুজব তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ছড়ানো গুজবও এমন একটি ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
এমন গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়ে গবেষকরা বলেছেন, ৫জি প্রযুক্তির সঙ্গে করোনা ভাইরাস বিস্তারের কোনো সম্পর্ক নেই।
এই গুজবে দাবি করা হয়, ৫জি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সামর্থ হ্রাস করে দেয়। অন্য একটি যুক্তি হলো, ৫জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে সহায়ক হয়।
কিন্তু রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডা. সাইমন ক্লার্ক বলেছেন, এই উভয় ধারণাই ‘সম্পূর্ণ আবর্জনাপূর্ণ, মিথ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা।
অনেক গবেষণা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, রেডিও তরঙ্গগুলো দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর করার মতো কোনো পরিস্থিতিই নেই, তা সেরকম শক্তি নেই।
এর সঙ্গে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডিয়াট্রিক্সের অধ্যাপক অ্যাডাম ফিন যোগ করেছেন যে, ৫জি থেকে ভাইরাস সংক্রমণ অসম্ভব।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস এক ব্যক্তির দেহ থেকে আরেক ব্যক্তির দেহে ছড়ায় তা আমরা জানি, এটি সত্য। এমনকি আমাদের ল্যাবেও অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে এটি ছড়িয়েছে। কিন্তু ভাইরাস এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ যা মোবাইলে নেটওয়ার্কের কাজ করে এবং ইন্টারনেট সংযোগে ভূমিকা রাখে তা থেকে এটা অসম্ভব।
লক্ষণীয় যে, যুক্তরাজ্যের এমন কয়েকটি শহরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে যেখানে ৫জি প্রযুক্তি কার্যকর হয়নি। ইরানেও এমন সময় করোনা ছড়িয়েছে যেখানে এখনো ৫জি কার্যকর হয়নি।
তাছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো নিয়ে এর আগে অনেক গবেষণা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, নেটওয়ার্কগুলো থেকে ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগ ছড়ানোর কোনো প্রমাণ নেই।
যুক্তরাজ্যে তীব্র গতিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এ রোগ সামাল দিতে সরকার এক প্রকার দিশেহারা৷ গতি ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৭০৮ জন মানুষের। আগামী দুই সপ্তাহ করোনার উচ্চ মৃত্যুহার চলবে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ।