ভারতের মুম্বাইয়ের নার্স অরুণা শানবাগ। তার ৬৮ বছরের জীবনে ৪২ বছরই কোমায় কাটিয়ে অবশেষে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ১৯৭৩ সালে মুম্বাইয়ের সরকারি কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের বেসমেন্টে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। ওই হাসপাতালেই জুনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
যেখানে কর্ম, যেখানে নির্যাতনের শিকার সেই হাসপাতালের আইসিইউতেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নির্যাতনের পর হামলাকারী তার গলায় কুকুরের শেকল পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন অরুণা। হামলাকারী তাকে মৃত মনে করে ফেলে রেখে যায় বেসমেন্টে। প্রায় ১১ ঘণ্টা পর সেখান থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ওই ঘটনার পরে ১১ ঘন্টা অনেক সময়, অক্সিজেন প্রবাহ বাঁধা পেয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অরুণার মস্তিষ্ক। কোমায় চলে যান অরুণা, সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি তিনি। ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের নিচতলার আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল নির্যাতনের শিকার অরুনাকে।
হামলার জন্য অরুণার সহকর্মীরা অভিযুক্ত করেন সোহানলাল ভার্তা বাল্মিকী নামের ওই হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয়কে। যার বিরুদ্ধে অরুণাই এর আগে একদিন হাসপাতালের খাবার চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন। ধারণা করা হয় প্রতিশোধ নিতেই ওই ঘটনা ঘটায় সোহানলাল। অরুণার ওপর পাশবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সেসময় সারা ভারত জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু অনেকটা নাটকীয়ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোহানলালের নামে ধর্ষণের মামলা না করে ডাকাতির মামলা করেছিলো। সাত বছরের সাজা হয় সোহানলালের।
২০১১ সালে পিংকি ভিরানী নামের এক লেখক অরুণার চিকিৎসা বন্ধ করার জন্য একটি পিটিশন দায়ের করলে অরুণার হাসপাতালের সহকর্মীদের বিরোধিতার মুখে আদালত তা খারিজ করেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সহকর্মীরা হাসপাতালে দিনরাত অরুণার সেবা করেছেন। চেষ্টা করেছেন তাকে যথাসম্ভব ভালো রাখার। হয়তো এই আশায় যে, কোনো একদিন জেগে উঠবেন অরুণা, ফিরবেন তাদের মাঝে। কিন্তু সব আশা শেষ করে ৪২ বছরের দীর্ঘ নীরব লড়াই শেষ করে চলে গেলেন অরুণা।