চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

৩৮ বছর আগের পাওনাও চান আড়তদাররা

ট্যানারি মালিকদের কাছে দেশের ১০টি চেম্বারের বকেয়া সাড়ে ৫৮ কোটি টাকা 

এ বছর চামড়া নিয়ে জটিলতা যেন শেষই হচ্ছে না। প্রথমে দাম না পেয়ে চামড়া নষ্ট করে ফেলা, এরপর কাঁচা চামড়া রপ্তানি অনুমতির উদ্যোগ এবং বকেয়া পরিশোধ না করলে ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের চামড়া বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত। আর এবার তার সাথে যুক্ত হচ্ছে দীর্ঘ ৩৮ বছর আগের পাওনা টাকার দাবি।

পাওনা টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে চামড়া বিক্রি করা না করা নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী এবং ট্যানারি মালিকদের বৈঠকের পর নতুন করে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই বৈঠকে তিন দফায় পাওনার টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।

এখন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা ১৯৮০ সাল থেকে তাদের বকেয়ার হিসাব কষছেন। আর এ কারণেই বকেয়ার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে।

তবে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, দীর্ঘ চার দশকে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ ব্যবসায় লোকসানে ডুবে পুঁজি হারিয়েছেন, আবার কেউ মারাও গেছেন। ফলে ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া সব টাকা উদ্ধারে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

চামড়া ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে কাঁচা চামড়া বিক্রি বাবদ প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। কম-বেশি দেশের সব জেলা চেম্বারের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা পাবেন। এরমধ্যে ঢাকার বাইরের ১০টি চেম্বারের দুই শতাধিক ব্যাবসায়ী ট্যানারি মালিকদের কাছে পাবেন ৫৮ কোটি ৫৩ লাখ ২ হাজার ৮৬৮ টাকা।

কোন চেম্বার কত টাকা পাবে
শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ট্যানারির মালিকদের কাছে কাছে পাওনা ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের ৫৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৫ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। সিলেট চেম্বারের ৫৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৫ কোটি ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার টাকা, টাঙ্গাইল চেম্বারের পাওনা ২৬ কোটি টাকা, বগুড়া চেম্বারের পাওনা ২ কোটি টাকা, ঝিনাইদাহ চেম্বারের পাওনা ৩ কোটি টাকা, বরিশাল চেম্বারের পাওনা ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা, ভৈরব চেম্বারের ১২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং নওগাঁ চেম্বারের ৩৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

তবে সবচেয়ে বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে ঢাকার আড়তদারদের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টাকা পাবেন নাটোরের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই দুই জেলার বকেয়ার পরিমাণ ঠিক কত? তা জানা যায়নি।

আড়তদারদের এই বকেয়া নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন ট্যানারি মালিকরা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন আড়তদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘সব জেলা চেম্বারের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা হবে। এই বকেয়া নিয়ে ট্যানারি মালিকরা লজ্জায় পড়েছে। তারা আমাদের বলছে, আপনাকে বকেয়ার বিষয়ে আর কথা না বাড়াতে অনুরোধ করছি।’

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বকেয়া টাকার তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তৈরি করা হচ্ছে। তবে রোববার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তখন তাদের একটা তালিকা দেয়া হয়েছে।’

‘‘কিভাবে বকেয়া আদায় করা হবে, তা নিয়ে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে আরেকটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পর আগামী ৩১ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের নেতাদের উপস্থিতিতে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে পাওনা টাকা কবে এবং কিভাবে আদায় করা হবে।’’

তবে ট্যানারি মালিকরা বলছে, ১৯৮০ সাল থেকে বকেয়া পাওনা হিসাব করছেন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিনের এই বকেয়া টাকা যাদের কাছে পাওনা রয়েছে তাদের অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে, কেউ ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লোকসানে পড়েছে আবার কেউ মারা গেছে। তাহলে এই টাকা আদায় করা হবে কিভাবে?

ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ১৯৯০ নয়, ৮০ সাল থেকে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের বকেয়া পাওনা হিসেব করছে। কিন্তু দীর্ঘ এই ৪০ বছরের মধ্যে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ লোকসানে ডুবে বসে আছেন, কেউ মারাও গেছেন। ওই সব লোকদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা তো সম্ভব নয়।

তবুও কিভাবে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আড়তদাররা তালিকা দিয়েছে। এটা পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা আদায় নিয়ে গত ২২ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়।

সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়ার আড়তদারদের পাওনা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। ২৫ আগস্ট ও ২৯ আগস্ট চামড়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পাওনা টাকার পরিমাণ ও পাওনা পরিশোধ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া শিল্প হলেও বর্তমানে বেকায়দায় রয়েছে এই শিল্প। উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ না থাকায় এই খাতে রপ্তানি আয়ও কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয় ১১৩ কোটি ডলার।

কিন্তু ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয় অস্বাভাবিক কমে ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ওই অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১২ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এরপর বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় তার আগের অর্থবছরে রপ্তানি হওয়া ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। তবে আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।