ধানের শীষে ভোটের মাধ্যমে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ১৬ কোটি জনগণ বিজয় অর্জন করবে বলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মন্তব্য করেছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের অত্যন্ত ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে৷
জনগণকে লক্ষ্য করে কামাল হোসেন বলেন: ধানের শীষ কোনো দলীয় প্রতীক নয়, ঐক্যের প্রতীক, জনগণের প্রতীক। ধানের শীষে ভোট দিলে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হবেন। দেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষে ভোট দিবেন। ভয় পাবেন না। সকল ভয় উপেক্ষা করে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ভোট দিয়ে ভোট গণনা শেষ করে বিজয় নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।
তিনি বলেন: দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। আমরা পরিবর্তন চাই৷ আমরা চাই ভোটের বিপ্লব। ৩০ তারিখ ভোটের বিপ্লব ঘটাবেন সবাই। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যেমন বিজয় অর্জন করেছি, ৩০ ডিসেম্বর তেমনি সকলে বিজয় অর্জন করবো। কয়েকটি দলের বিজয় নয়, ১৬ কোটি মানুষের বিজয় হবে। আমরা ২০২১ সালে একসাথে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবো।
ড. কামাল হোসেন বলেন: আমরা দলীয়করণ করার জন্য বিজয় চাই না। দলীয়করণ থেকে মুক্ত করতে আমরা যেতে চাচ্ছি। দলীয়করণ হলো জমিদারি। পঞ্চাশের দশকে আমরা জমিদারি থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন যে জমিদারি সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে ৩০ তারিখ আমরা মুক্ত হবো।
ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন: ঐক্যবদ্ধ জনগণের পক্ষে ভোট দিন। ইনশাল্লাহ বিজয়ী হবেন। আমি বিজয়ের ভাব সারা দেশে দেখছি। মানুষ বিশ্বাস করছে, বিজয় হয়ে গেছে। সারা দেশ থেকে অসাধারণ সাড়া পাচ্ছি। মানুষ আনন্দ উল্লাস করছে। আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ফাইট করেছি৷ একাত্তরে আমরা ফাইট করে বিজয়ী হয়েছি৷ বাংলার মানুষ শক্তির কাছে, অর্থের কাছে মাথানত করেনি।
গণফোরাম নেতা ড. কামাল বলেন: আমরা প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চাই। তবেই দেশের মালিক হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।
সরকারের উন্নয়ন নীতির কড়া সমালোচনা করে কামাল হোসেন বলেন: প্রবৃদ্ধির হার বাড়া মানে উন্নয়ন নয়। উন্নয়নে যদি গণতন্ত্র ও জনগণের মালিকানা না থাকে তা উন্নয়ন নয়। জনগণ ক্ষমতার মালিক থাকলে সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন। উন্নয়নের কথা তো পাকিস্তানও বলতো। আইয়ুব খানও বলতেন। তিনি তো উন্নয়ন উন্নয়ন বলে মুখে ফেনা উঠাতেন।৷ বলতেন, বাঙালিরা বুঝে না। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছেন, মানুষের যদি অধিকার না থাকে তাহলে উন্নয়নের কোনো অর্থ নেই৷ গণতন্ত্রকে খাটো করে রেখে যারা বলে উন্নয়ন আগে, এটা আইয়ুব খানের কথা, ৫০ বছর আগের কথা, স্বৈরশাসকের কথা। এটা বাংলাদেশের কথা হতে পারে না। উপনিবেশিক শাসকরা বলতো, প্রজা হয়ে থাকো, আমরা উন্নয়ন করে দিচ্ছি। কিন্তু এই কথা বাংলাদেশে বলা যাবে না।
কামাল হোসেন জনগণকে আহ্বান জানিয়ে বলেন: আপনারা বাড়ির মালিকানা ছেড়ে দেবেন না। শহীদরা আমাদেরকে আমানত দিয়ে গেছেন। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের মালিকানা জনগণের। এর দায়িত্ব বেড়েছে। মালিকানা থেকে আমাদেরকে সরিয়ে রাখার জন্য অনেক ভয়-ভীতি দেখাবে তারা।
এসয়ম ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন: সরকারের ইতোমধ্যে নৈতিক পরাজয় হয়েছে। কারণ তাকে এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তা নিতে হচ্ছে। আমি গণমাধ্যমকে বলবো, সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব হলো সঠিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করা, চাপের মুখে না থেকে জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ তুলে ধরুন।
দেশের সমস্ত মানুষ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত জানিয়ে ফখরুল গণন্ত্রের মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান।
এসময় কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন: নির্বাচন কমিশন যা করেছে তা তার জন্য খুব খারাপ হবে। সিরাজউদ্দৌলার সময় যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো তাদের সঙ্গে নিন্দিত হবেন তিনি (প্রধান নির্বান কমিশনার)।
তিনি আরো বলেন: যারা ৭১ দেখেছেন তারা এবারের ঐক্য দেখলে খুশি হতেন। কর্মীরা ভীত নয় বরং ক্ষুব্ধ হচ্ছে। এই ১০ দিনে সরকার যা করেছে তা তাদের ক্ষতিই করেছে।
এসময় ড. কামাল হোসেনের হাতে ধানের শীষ তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।