বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে আজ বেলা ৩ টার মধ্যেই ‘কিছু টাকা’ দিতে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন ‘অন্যথায় আমরা আমাদের মতো অর্ডার দিব’।
বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় ১১ এপ্রিল গ্রিন লাইন বাসের টিকেট বিক্রি না করতে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করেন।
সে ধারাবাহিকতায় আজ ১০ এপ্রিল বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে গ্রিন লাইন বাসের আইনজীবী অজিউল্লাহ রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য ১ মাস সময় চান।
এরপর আদালত বলেন, ‘রাসেলের ক্ষেত্রে ঘটনাটা তো অ্যাক্সিডেন্ট না। তারপর আবার আপনারা ছেলেটার হাসপাতালের কোনো খরচ দিলেন না। খোঁজ নিলেন না। মানবিকতা বলেও তো একটা বিষয় আছে। এরপর আমরা সময় বেঁধে দিলাম। আজকে যদি কিছু টাকা হলেও দিয়ে আসতেন তাহলেও একটা কথা ছিল। আপনারা আজই কিছু টাকা দিয়ে তারপর কোর্টে আসুন।’
এরপর আদালত এ বিষয়ে আদেশ আজ বেলা ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করে বলেন, ‘৩টার মধ্যেই কিছু টাকা দিয়ে আসুন। অন্যথায় আমরা আমাদের মতো অর্ডার দিব।’
এ সময় আদালতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উপস্থিত ছিলেন রাসেল সরকার। সেই সাথে আদালতে উপস্থিত ছিলেন গ্রিন লাইনের মালিক হাজি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
এর আগে গত ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর একই দিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩ এপ্রিলের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা রাসেলকে বুঝিয়ে দিতে গ্রিন লাইন পরিবহনকে আবার নির্দেশ দেন এবং টাকা দেয়ার পর বৃহস্পতিবার তা হাইকোর্টকে জানাতে বলেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বিষয়টি হাইকোর্টের এই বেঞ্চে আদেশের জন্য এলে রাসেলের পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘গ্রিন লাইন পরিবহন আমাদের সাথে টাকা দেয়া নিয়ে এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি।’ এ সময় গ্রিন লাইন পরিবহন পক্ষের আইনজীবী ওয়াজি উল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘গ্রিন লাইনের প্রোপাইটার চিকিৎসার জন্য এখন দেশের বাইরে রয়েছেন।’
তখন আদালত বলেন, ‘তার ব্যবসা তো বন্ধ হয়ে যায়নি। তিনি কোন দেশে গেছেন? কবে গেছেন? কবে ফিরবেন জানান। আর তার ম্যানেজার কোথায়? ম্যানেজারকে ডাকুন, এ বিষয়ে জানাতে বলুন। অন্যথায় আমরা কি গ্রেপ্তার করানোর ব্যবস্থা করবো? নাকি গ্রিন লাইনের সমস্ত গাড়ি জব্দ করার ব্যবস্থা করবো?’
গ্রিন লাইনের গাড়ি জব্দ করে বিক্রি করে আদালত টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা নেবার কথা বললে গ্রিন লাইনের আইনজীবী দুপুর ২টার মধ্যে ম্যানেজারকে আদালতে হাজির করবেন বলে জানান। এ সময় আদালত বলেন, ‘যত বড় ব্যবসায়ীই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।’
এরপর ওইদিন দুপুর দুইটা আদালতে এসে হাজির হন গ্রিন লাইনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস ছাত্তার। তিনি আদালতকে বলেন, তাদের মালিক চিকিৎসার জন্য ভারত গেছেন ৩১ তারিখ। আগামী ৯ তারিখ তিনি দেশে ফিরবেন। এসময় আদালত বলেন, আপনাকে কি এ বিষয়ে কিছু তিনি বলে যাননি? ম্যানেজার জানান, মালিক বলেছেন তিনি দেশে এসে এই সমস্যার সমাধান করবেন। এরপর আদালত বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এবং এ সময় ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আগামী ১০ তারিখের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা না দিলে ১১ তারিখ টিকেট বিক্রি করবেন না।’
গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের খরচে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাসেলের বিচ্ছিন্ন পায়ে কৃত্রিম পা লাগাতে বলেন আদালত। এছাড়া রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হলে, সে খরচও গ্রিন লাইনকে দিতে বলা হয়। আর আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করে ৩১ মার্চ হাইকোর্টে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় এক যুবকের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেটকার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস চালক তার উপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বা পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।