ক্রিকেটের জনক তারা! সবচেয়ে দুর্ভাগাও! তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে একবারও শিরোপা জিততে না পারার কলঙ্কটা একমাত্র তাদেরই বয়ে বেড়াতে হয়। সেই হতাশা মোচনের সুবর্ণ সুযোগটা এসে গেল ইংল্যান্ডের সামনে। বার্মিংহামের দ্বিতীয় সেমিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে স্বাগতিকরাও জানিয়ে দিল শিরোপার সুযোগটা সহজে হাতছাড়া করতে চায় না এবার! রোববার লর্ডসে মরগানদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
স্টিভেন স্মিথের কাঁধে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ২২৩ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর থাকা ইংল্যান্ডের কাছে তা পাত্তাই পায়নি। জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর বিস্ফোরক ওপেনিং জুটিতেই জয়ের ভিত দাঁড়িয়ে গেছে। তাতে দাঁড়িয়ে ১০৭ বল বাকি থাকতেই ২২৬ রান তুলে দাপুটের জয় পায় ইংলিশরা।
ইংল্যান্ডের জয়ে সুযোগ এলো দারুণ এক ক্ষণের। নতুন এক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাওয়ার অপেক্ষায় এখন ক্রিকেটবিশ্ব। ১৪ জুলাই লর্ডসের ফাইনালে ইংলিশদের প্রতিপক্ষ আগের দিন ভারতকে কাঁদানো নিউজিল্যান্ড, যারাও কখনো বিশ্বকাপের স্বাদ পায়নি।
শেষবার অস্ট্রেলিয়া-ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলয় ভেঙে নতুন দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা, সেই ১৯৯৬ আসরে। আর বিশ্বকাপের ফাইনালে শিরোপা না জেতা দুদলের লড়াই শেষ দেখা গিয়েছিল ২৭ বছর আগে, ১৯৯২ সালে। সেবারও ফাইনালিস্ট ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তাদের কাঁদিয়ে কাপ নিয়ে যায় পাকিস্তান।
তবে ২৭ বছরের সেই দলের সঙ্গে বর্তমান দলটার যে আকাশ-পাতাল ফারাক সেটা শেষ চার বছর ধরেই বুঝিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। এই সময়ে প্রতিটা ম্যাচেই দলটি বুঝিয়ে গেছে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য তৈরি তারা। এই প্রক্রিয়ার শেষ ভাগের একধাপ আগে ইংলিশদের সামনে পড়ে কপালটাই জ্বলে গেল অস্ট্রেলিয়ার!
অজিদের মূল সর্বনাশটা করেছেন রয় আর বেয়ারস্টো। দুজনে মিলে বিশ্বকাপজুড়ে অন্য দলগুলোকেও জ্বালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বার্মিংহামে ছারখার করে দিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদেরও।
রয় আর বেয়ারস্টো মিলে ১৮ ওভারেই তুলেছেন ১২৪। তাণ্ডবটা বেশি ছিল রয়ের ব্যাটেই। ৫০ বলে তুলে নেন ফিফটি।
৩৪ রান করে বেয়ারস্টো জুটি ভেঙে ফিরলেও রয় তার ঝড় চালিয়ে গেছেন। সামনে যাকেই পেয়েছেন তাকেই মেরেছেন। পথে যখন দেখতে পাচ্ছিলেন সেঞ্চুরিটাও, তখনই হতাশ করলেন। ৯ চার আর ৫ বিশাল ছক্কায় ৬৫ বলে ৮৫ করে ফিরেছেন প্যাট কামিন্সের বলে, উইকেটের পেছনে অ্যালেক্স ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে। ইংলিশদের রান তখন ১৪৭।
এরপর বাকি পথটা আর পেছলাতে দেননি জো রুট ও অধিনায়ক ইয়ন মরগান। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৭৯ রানের জুটিতে ভর করে ৩২.১ ওভারেই শেষ অজিদের ফাইনাল স্বপ্ন।
৪৬ বলে ৪৯ রান করেছেন রুট। তার চার ৮টি। সমান চারে ৩৯ বলে ৪৫ করেছেন ইংলিশ দলপতি মরগান।
আগে প্রথমে ব্যাট করে ম্যাচ সেরা ক্রিস ওকস ও জফরা আর্চারের তাণ্ডবে ১৪ রানেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় অজিরা। সেখান থেকে স্মিথের ১১৯ বলে ৮৫ রানের ইনিংসে মোটামুটি রান দাঁড় করায় অস্ট্রেলিয়া।
৩টি করে উইকেট পেয়েছেন ওকস ও আদিল রশিদ। ২ উইকেট পেয়েছেন আর্চার। বোলারদের গড়ে দেয়া মঞ্চে বাকি কাজটা সারলেন রয়-রুটরা।