প্যারিসের নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত একজন রোগীর করোনাভাইরাস ছিলো বলে নিশ্চিত করেছেন তার চিকিৎসক। আর সে সময়টি ছিলো ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯।
ওই চিকিৎসকের দাবি সত্য হলে, ইউরোপে যে সময় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলা হচ্ছে, তার এক মাস আগেই সেটি পৌঁছে গেছে ফ্রান্সে। তখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগ সম্পর্কে অবগত ছিলো না। কেননা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯; উহানে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করেছে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয় উহানে।
প্যারিসের নিকটবর্তী অভিসেইন এন্ড জিন-ভার্দিয়ার হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিসিন হেড ডা. ইভেস কোহেন বিবিসির নিউজর এক প্রোগ্রামে বলছিলেন, সেই সময় নেওয়া ওই ব্যক্তির দেহের নমুনা সম্প্রতি পরীক্ষা করা হয় এবং তার কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস পজিটিভ নিশ্চিত হওয়া গেছে। রোগী আমিরুচে হামার প্যারিসের উত্তর-পূর্বের বোবিনির ৪৩ বছর বয়সী ব্যক্তি।
ডা. কোহেন বলেছেন, আমরা জানতে পারি যে, করোনাভাইরাস লক্ষণ দেখা যেতে পাঁচ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। সে হিসাবে ওই রোগী ১৪-২২ ডিসেম্বরের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন। মূলত শুষ্ক কাশি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্টসহ তাকে ২৭ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, যা পরে করোনার প্রধান লক্ষণ হিসেবে পরিচিতি পায়।
সে হিসেব অনুযায়ী, উহানে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করার আরও চারদিন আগেই প্যারিসে করোনা রোগী পাওয়া গেছে।
সুস্থ হওয়া ওঠা রোগী বিবিসিকে বলেছেন, তিনি কোনো সংক্রামিত এলাকায় ভ্রমণ করেননি। তারপরও কীভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।
ডা. কোহেন বলেছেন যে, তার দুই শিশু ও সে সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তার স্ত্রীর কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
তবে ডা. কোহেন উল্লেখ করেন যে, রোগীর স্ত্রী চার্লস দ্য গল বিমাবন্দরের নিকটবর্তী একটি সুপার মার্কেটে কাজ করতেন এবং সম্প্রতি চীন থেকে আগত লোকদের সংস্পর্শে আসতে পারেন তিনি।
রোগীর স্ত্রী বলেছেন, প্রায়শই বিভিন্ন গ্রাহক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ওই সুপার মার্কেটে আসেন।
ডা. ইভেস কোহেন বলছিলেন, আমরা ভাবছি যে, রোগীর স্ত্রীর পরীক্ষা অসম্পূর্ণ ছিলো কিনা! তার বিষয়টি আরও বেশি তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাধারণত এখন পর্যন্ত সবাই জানে, ২৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সেদিন তিনজন ব্যক্তির শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। যাদের মধ্যে দুজন উহানে ভ্রমণ করেছিলেন, তৃতীয় ব্যক্তি তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য।
কিন্তু সম্প্রতি ডা. ইভেস কোহেনের দাবি অনুযায়ী তারও এক মাসে আগে করোনা ছড়িয়েছে ফ্রান্সে। তার মানে ইউরোপে ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখেই কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।