২৪ ঘণ্টা থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলার আসামীরা। ভিক্টিম ব্লেমিং, সাক্ষীদের ঝামেলা এড়ানোর মানসিকতা, অপর্যাপ্ত বিচারক, ওসিসিতে দক্ষ পুলিশ ও আইনজীবীর অভাব থাকায় দেশে অনেক ধর্ষণ মামলার বিচার নিশ্চিত না হওয়ার কারণ বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২০১২ থেকে ২০১৭ তে ঘটে যাওয়া ২৫টি ধর্ষণ মামলার বর্তমান অবস্থা, মামলা পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণগুলো তুলে ধরা হয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভিক্টিম ব্লেমিং কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা চিন্তা করতে হবে। বিচারহীনতা বন্ধ না করলে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
অপরাধীর স্বীকার করে নেওয়া ঘটনাগুলোতেও ভিক্টিমকেই দোষ দেওয়া হয়। সমস্যার সমাধানে মনমানসিকতার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি মনমানসিকতার পরিবর্তন না আনলে এসব থেকে মুক্ত হতে পারবো না।
গবেষণায় উঠে আসা তথ্য থেকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের রুমা জানান, গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টা থেকে ১৫ দিনেই আসামী খালাস পেয়েছেন ২৫টি মামলাতেই। ৬ মাসে চার্জশিট হয়েছে ২২টি মামলায়। এই ২৫টি মামলার মধ্যে ৩টি নিস্ক্রিয় আছে, ২০টি মামলার অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে। ৩টি মামলাতে এখনও অভিযোগপত্রই দেওয়া হয়নি।
আইনজীবী এলিনা খান বলেন, ভিক্টিম ব্লেমিং বন্ধ করে কিভাবে তার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি, তা ভাবতে হবে। দেশে বিচারকের স্বল্পতা খুবই বেশি। এসব কারণে আসামীর বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। দেশে আইন আছে কিন্তু তা কার্যকর নাই। সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তন জরুরি। রেপিস্টের সাথে ভিক্টিমের বিয়ের প্রতিবাদ করেছি আমরা। দেশে কোনো ফরেনসিক ল্যাব নেই, তাই আলামত সংগ্রহে দেরি হয়। সেটাতেও সুযোগ পায় আসামী।
তিনি আরও যোগ করেন, ওসিসিতে দক্ষ আইনজীবী বা খুব দক্ষ পুলিশ কম থাকে। তারা ঠিকভাবে এফআইআর লিখতে পারে না। সেই দুর্বলতার কারণে আসামী খালাস পেয়ে যায়। মেডিকেল ফর্মটা এমন করে বাংলা ও ইংরেজিতে করা হয় যে, বাদী অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পারেনা। সেটাতেও অনেকে সুযোগ পায়। এসবই ঠিক করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণ নিয়ে কর্মরত ১২টি প্রতিষ্ঠান এই গবেষণাকাজে সহযোগিতা করেছে।