১৯৯৬ সালে এদিন আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের সময় ক্ষমতায় ফিরেছিলো ২১ বছর পর। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় দলটি ক্ষমতায় আছে টানা সাড়ে ছয় বছর। ৯৬ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর গত ১৯ বছরে প্রায় এক যুগই ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে শুধু আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছিলো, এমন নয়। বরং গণতন্ত্রকেও কবর দেওয়া হয়েছিলো। যে কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয় টানা ২১ বছর।
কিন্তু গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেনো ধসে না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন তারা।
এক্ষেত্রে ধ্বংসস্তুপ থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত করার কৃতিত্ব এককভাবে শেখ হাসিনার উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেছেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে এখন তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ আরও বড়।
সাড়ে তিন দশক ধরে একা হাতে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে চলা শেখ হাসিনার দীর্ঘ পথ পরিক্রমাকে বৈচিত্রময় হিসেবেও উল্লেখ করেছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, এতোটা সময় টানা ক্ষমতায় টিকে থাকাটা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল, ক্ষমতায় থেকে এই দলই দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেকটা। এখন আমরা অর্থনৈতিকভাবেও বেশ অগ্রগামী।
‘কিন্তু দেশে গণতন্ত্রের চর্চাটা আর সেভাবে মিলছে না,’ উল্লেখ করে অস্বস্তির কথা বলেছেন তিনি। দেশে গণতন্ত্র যে অবস্থানে আছে সেটা থেকে আওয়ামী লীগ যে কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না সে কথাই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা এই সব যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ‘যার যার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে, তা না হলে গণতন্ত্রের যে বন্ধ্যাত্ব দেশে দেখা দিয়েছে তা থেকে দেশকে রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে যাবে,’ বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
‘আর কাজটা করতে হবে সর্বাধিক সমর্থন পাওয়া রাজনৈতিক দলকেই,’ বলেও মনে করছেন শান্তনু মজুমদার। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো যে রাজপথ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা উঠে এসেছে এই অধ্যাপকের বক্তব্যে।
তিনি বলেন, বিরোধীদলে থাকার সময় অনেক মতাদর্শিক বিষয় সামনে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সেই দলই যখন ক্ষমতা লাভ করে তখন অনেক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সে কারণে আদর্শিক বিচ্যুতিও ঘটে। তিনি বলেন: অনেকেই বলে থাকেন, আগে দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র না হলেও চলবে। আদতে গণতন্ত্র ছাড়া কিন্তু দেশের ঠিকঠাক ভিত্তি তৈরি হয় না।
‘তাই গণতন্ত্রকে তার মতো করেই বাড়তে দিতে হবে। তাহলেই দেশ উন্নতির পথে এগোতে পারবে দ্রুত,’ বলে মনে করেন শান্তনু মজুমদার। একইরকম কথা বললেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ। তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আওয়ামী লীগের এই লম্বা পথযাত্রা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
তবে, একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ সবসময় একই রকম থাকে না, সময়ে সময়ে সেটাতে পরিবর্তন আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিক থেকে এই দলকেও হয়তো অনেক জায়গায় আপোষ করতে হয়েছে।
‘তারপরও এই লম্বা পথচলা তাদের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসকেই সামনে টেনে আনে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সেসব তো এই দলের নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, হয়তো তাদের গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে অনেকে বিতর্ক তুলতে পারেন। কিন্তু যে অর্থনৈতিক উন্নয়নটা হয়েছে সেটাও নিশ্চয়ই দেশের কম প্রাপ্তি নয়।
তারপরও গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্রের যে চর্চা ব্যাহত হচ্ছে সেটা আমাদের জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতিই বয়ে আনছে।
‘গণতন্ত্র চর্চা করতে পারলে দেশের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদে যদি বিরোধীদলও নিজেদের মতাদর্শ তুলে ধরতে পারতো তাহলে জনগণের চাওয়া পাওয়া আরো বেশি প্রতিফলিত হতো। লাভবান হতো বাংলাদেশ যে বাংলাদেশের জন্মে নেতৃত্ব দিয়েছে এখন ৬৭ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ।