মনোয়ার হোসেন মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আট দফা দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ক্লাস বর্জনের ২১তম দিনে রোববারেও বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাবি বাস্তবায়ন এবং ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ঘটনার প্রায় চার সপ্তাহ পার হলেও উভয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি বুয়েট প্রশাসন।
রোববার দুপুরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ঘটনার প্রায় এক মাস পরেও প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও কোনো মামলা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গণপরিবহণ বন্ধেও কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এছাড়া ঘটনার সঠিক ও বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়নি।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দীপ্ত সাহা বলেন, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক স্টাফের ছেলেকে গ্রেফতার করা হলেও পরে সে জামিনে মুক্তি পায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির অগ্রগতি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করা হচ্ছে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন যেন আমাদের সঙ্গে একপ্রকার ধোঁয়াশার সৃষ্টি করছে। তারা আমাদের পরিষ্কার করে কিছু বলছেও না। বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে আছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরবো না।
গতকাল (শনিবার) বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, বুয়েটে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উপাচার্য একাধিকবার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সকল দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করেছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তদন্তের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, ভিসি স্যার এখন শিক্ষকদের নিয়ে মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনারা ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে পদক্ষেপের বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক সত্য প্রসাদ মজুমদার জানান, আমি এ ব্যাপারে জানি না। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা উপাচার্যের কাছে যেতে পারেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় চার সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোনো পক্ষই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষক আব্দুর রহিমকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কমিটির সদস্যরা গত ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর এবং ৬ ও ৭ নভেম্বর বৈঠক করে প্রত্যক্ষদর্শী, হলের কর্মচারী এবং সাধারণ ছাত্রদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে।
আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল সোমবার আমাদের মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। মিটিং থেকে আমরা পরবর্তী কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, ঘটনার উৎপত্তিস্থল যেহেতু বুয়েট ক্যাম্পাস, তাই মূল দায়িত্ব বুয়েট কর্তৃপক্ষের। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হলো সেটা তারা ভালো বলতে পারবেন। আমাদের ছাত্রদের কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি আমরা।
বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ‘বহিরাগত তাড়ানোর অভিযানের’ মধ্যে গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় আহত হন বুয়েটের পাঁচ শিক্ষার্থী। পরে দোষীদের বিচারসহ আট দফা দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও ল্যাব বর্জন করে আসছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। গত ৩০ অক্টোবর তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে বুয়েট প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেন।
সংঘর্ষের ঘটনার পর বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বুয়েটের এক কর্মচারীর ছেলে রাজুসহ কয়েকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। পুলিশ তখন রাজুকে গ্রেফতার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বার বার ক্লাসে ফিরে যাওয়ার নোটিশ দিলেও তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে কেউ কিছু বলছেন না।