শেষ ফাল্গুনের ভোর। এখনো বাতাসে চলে যাওয়া শীতের হিম ঘ্রাণ। রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ২১ শিক্ষার্থী চলেছে নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে। প্রথমবারের মতো নিজের হাতে উৎপাদন করা ফসল উত্তোলন করবে তারা। সেই আনন্দ তাদের চোখেমুখে। এর আগে গত ডিসেম্বরে মুন্সিগঞ্জের বাগেশ্বর গ্রামের কৃষক আজিজুল শেখের ক্ষেতে আলু রোপন করে এসেছিলো তারা। এবার ফসল ঘরে তোলার পালা।
বাগেশ্বর গ্রামের আলুক্ষেতে যখন ওরা পৌঁছালো তখন মাঠ জুড়ে সকালের সোনারোদ ঝিলিক দিয়ে উঠছে। কৃষকেরা মাঠে মাঠে ব্যস্ত আলু তোলার কাজে। কেউ লাঙল দিয়ে খুঁড়ে নিচ্ছে মাটির নরম বুক, আর মাটি ভেদ করে বের হয়ে আসছে ঘামে-শ্রমে ফলানো ফসল, আলু। খুদে কৃষকরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলো আলু তোলার জন্য, আলু রোপনের সময় নির্ধারণ করা নিজ নিজ সারিতে।
কর্মসূচির পরিচালক শাইখ সিরাজের নির্দেশনায় শুরু হলো আলু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা। কার আগে কে, কত বেশি আলু তুলতে পারে সেই প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মাটির স্পর্শে শহরে বেড়ে ওঠা শিশু কিশোর কোমল হয়ে উঠলো মাটির মতো, ভেতরে উচ্ছ্বাস ঠিকরে গান হয়ে ফুটলো কারো কারো ঠোঁটে, ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার বুকে ঠেকাই মাথা..’। ফিরে চল মাটির টানে জুনিয়র পেলো নতুন রং।
এক সময় শেষ হলো আলু তোলার কাজ। এবার আলু মাপার পালা। কে বেশি তুলেছে আলু? এমন প্রশ্নে সবারই হাত উপরে, নিজের তোলা আলুটাকেই বেশি মনে করছে খুদে কৃষকদল। কিন্তু প্রতিযোগিতায় রয়েছে সূক্ষ্মবিচারের ব্যবস্থা। দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মাপা হলো আলু। সময় ও আলুর পরিমাণ এই দুই বিষয়কে বিবেচনায় রেখে বাছাই করা হলো প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় জনকে।
কৃষকের ক্ষেত থেকে উত্তোলিত আলু তারা কিনে নেয় ন্যায্যমূল্যে। কৃষকরা অনেক সময়ই ন্যায্যমূল্য পায় না। ফলে কৃষিকাজে লাভ পায় না কৃষক। তাদের শ্রমের লাভ কেড়ে নেয় মধ্যসত্ত্বভোগী। কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায় সে শিক্ষাই দেওয়া হলো এই খুদে কৃষকদের।
এবার ফেরার পালা। প্রতিযোগী নাবিলা তাবাসসুমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কৃষক হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন? জানালো, কৃষি কাজ বড় কষ্টের। কৃষকদের যে কী পরিমাণ কষ্ট হয় তার কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। আমি বড় হয়ে কৃষকদের কাজটা কী করে আরও সহজ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে চাই।
উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানা বললেন, শিশু-কিশোরদের কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা সত্যি প্রশংসনীয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু এই শিশু-কিশোররাই নয়, দেশের সকল শিশু-কিশোর আগ্রহী হবে কৃষির প্রতি। আর এটা হবে কৃষিপ্রধান দেশের জন্য এক অনন্য আন্দোলন।
শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ‘ফিরে চল মাটির টানে জুনিয়র’ প্রচারিত হবে ১০ মার্চ, ২০১৮, শনিবার রাত ৯টা ৫০মিনিটে চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে।