চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

২১ আগস্ট ট্রাজেডি: গ্রেনেডের টার্গেট ছিলো শেখ হাসিনা

২১ আগস্ট ২০০৪ সাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সে দিনটি আর অন্যান্য দিনের মত সাধারণ দিন নয়, এক বিভীষিকাময় কলংকিত দিন। সে দিনের গ্রেনেডের হিংস্র আক্রমন, দানবীয় সন্ত্রাস, মানবতা বিরোধী নারকীয় জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ অবলোকন করে সারা পৃথিবীর বিবেক হয়ে গিয়েছিল আতংকিত, স্তব্ধ বাকরুদ্ধ। বিশ্ব রাজনীতিবৃন্দ এই বীভৎস হত্যাকান্ডের হোতা ঘাতকদের প্রতি ঘৃণা ধিক্কার জানালেন।

শনিবারের ওইদিন বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী। তাদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাস বিরোধী সভায় ইতিহাসের বর্বরোচিত যে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ছিল, সে হামলার পিছনে যে হাওয়া ভবনের দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি তারেক রহমান ও তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি হাত ছিল তা বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্টে বেড়িয়ে এসেছে। তাদের নির্দেশেই বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মামলার সকল আলামত নষ্ট করে এটা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দলের কারণে হয়েছে বলে তারা প্রচার করে পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এ জন্যই এ মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নোয়াখালীর জজ মিয়ার পরিবারকে আজীবন ভরণপোষণের লোভ দেখিয়ে সিআইডি জোর করে জজ মিয়া থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেছিল।

এ মামলাটি বিএনপি জামায়াত জোট আমলে কূটকৌশলে এক রকম ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। কিন্তু বিধি বাম ২০০৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসাবে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তিন চতুর্থাংশ মেজরিটি নিয়ে মহজোট ক্ষমতায় এসে মামলাটি পুনর্তদন্তের ব্যবস্থা করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে থাকে। এই মামলায় বিএনপি জামায়াত জোটের সাবেক স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী লুৎজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস ছালাম পিন্টু ও হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ অনেককেই সিআইডির একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য বেড়িয়ে এসেছে হামলা থেকে শুরু করে সব ছিল হাওয়া ভবন ও তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নখদর্পনে। কিন্তু অপারেশন সাকসেসফুল না হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার। ঘটনার দায় এড়ানোর দায়িত্ব পড়ে হাওয়া ভবনের ওপর। দায়িত্ব পেয়েই হাওয়া ভবন উঠে পড়ে লাগে আলামত গায়েব করার। এ আলামত গায়েবের দায়িত্ব দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ওপর। তিনি সিআইডির কর্মকর্তাদের আজীবন সুবিধা দেয়ার নিশ্চয়তাসহ পদোন্নতি দেয়ার লোভ দেখিয়ে কব্জা করেন। এই এ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে সিআইডির সাবেক এসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদের ওপর।

হাওয়া ভবনে শেখ হাসিনা কিলিং মিশনের যে বৈঠক হয়েছিল মুফতি হান্নানের সেই বিষয়ক সাক্ষাতকারটি ওয়েভ সাইটে দেখলে যে কেউ আতংকে শিউরে ওঠবেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের ‘প্রোর্ট্রেট অব জিহাদ’ প্রমান্য চিত্রে মুফতি হান্নানের এ লোমহর্ষক সাক্ষাতকারটি অন্তভুক্ত হয়েছে। ঐ সাক্ষাতকারে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনার কিলিং মিশনের গ্রেনেড হামলার আদ্যপান্ত বর্ণনা করেছেন। ওই প্রামান্যচিত্রে হরকাতুল জেহাদ নেতা হান্নান বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অঘোষিত যুবরাজের হাওয়া ভবনে বসে হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে উল্লেখ করেন। ঐ সভায় জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী নূর চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন জঙ্গি নেতার উপস্থিতির কথা তিনি বলেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার মুফতি হান্নান হাওয়া ভবনে বৈঠক হওয়া থেকে শুরু করে জিয়াপুত্র তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মেজর নূর জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য ঐ সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেছেন। মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে বলেন,‘হামলার মূল পরিকল্পনাই ছিল শেখ হাসিনাকে নিশ্চিন্ন করা। যার পরিকল্পনায় ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি খুনী নূর চৌধুরী এবং তারেক জিয়া নিজে। চারটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমেই ২১ আগস্ট হামলার পুরো চক্রান্ত করা হয় হাওয়া ভবনে বসেই। ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনটি প্রস্তাবের একটিকে অনুসরণ করে চালানো হয় মূল হামলা। ঐ জবানবন্দিতে হান্নান ফাঁস করে দেয় এই হামলায় হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতার কথা।

হাওয়া ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার জবানবন্দিমূলক সাক্ষাতকারে মুফতি হান্নান বলেন, হাসিনাকে শেষ করে দিতে হবে। তাকে কোনোদিনই রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবেনা। মুজাহিদ শেখ হাসিনাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এবং বাবর তাকে দেশ থেকে চিরতরে বিদায় বা শেষ করে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। মেজর নূর তিন ধরনের পরামর্শ দেয়। যার মধ্যে জনসভায় আক্রমন করে তাকে শেষ করে দেয়ার পদ্ধতিটিই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তাকে জনসভায় হামলা চালিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

কিন্তু অলৌকিকভাবে শেখ হাসিনা গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে গেলে তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কিন্তু এ গ্রেনেড হামলায় নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। এবং ৫’শত নেতাকর্মী আহত হন। এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলায় বিশ্ব মানবতায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও টলেনি শুধু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাষাণ হৃদয়। বরং এ মামলা তদন্তের নামে তারা নানা পৈশাচিক ও অমানবিক খেলায় মেতে ওঠে। এ হত্যা মামলাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য দায়সারা গোছের কিছু মামলা দায়ের করে। লোক দেখানোর জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেডহামলার ঘটনায় বিচারপতি জয়নুল আবদীনকে নিয়ে গঠিত এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে ৪০ দিন তদন্তের পর ঘোষণা দেন, একটি শত্রুরাষ্ট্রের ইন্দনে এ হামলা হয়েছে। আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত তদন্ত কমিটি অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করে যাদের মধ্যে ছিল শৈবাল সাহা পার্থ ও আওয়ামী লীগ নেতা ওয়ার্ড কমিশনার মোখলেসুর রহমান। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের ওপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের দাবির মুখে বিএনপি সরকার ২১ আগস্টের ঘটনা তদন্তের জন্য এফবিআই, ইন্টারপোল ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দাদের বাংলাদেশে আসার অনমুতি দেয় কিন্তু সেসব গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কোনটিই প্রকাশ করা হয়নি। তারপর এসব মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই সিআইডিতে মামলা স্থানান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাতারাতি মামলার চার্জসিট দাখিলের নির্দেশ দেয়ার পরই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর ও হাওয়া ভবনের নির্দেশিত পথেই চলে মামলা তদন্তের প্রহসন। এই নির্দেশ পেয়ে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান একদিনের মধ্যেই বিশ জনকে গ্রেফতার করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৫ সালের ৯ জানুয়ারি নোয়াখালির সেনবাগ থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে। এর পরদিন গুলশান থানার হত্যা মামলার আসামি দুই ভায়রা আবুল হাসেম রানা ও শফিকুল ইসলাম নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। কৌশলে দুই ভায়রাকেই গ্রেনেড হামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে জজ মিয়ার দরিদ্র পরিবারের আজীবন ভরণপোষনের দায়িত্ব নেয়ার লোভ দেখিয়ে এবং দুই ভায়রা রানা ও শফিকুল ইসলামকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে বাধ্য করা হয়।

হাওয়া ভবনে কারা, কীভাবে এ হত্যাযজ্ঞের লীল নকশা প্রণয়ন করেছিল তা নিয়ে ২৭ অক্টোবর ২০১০ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি ষ্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবদনের প্রতিবেদক লিখেছেন, গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা, হুজির বিভিন্ন সূত্র, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং জিজ্ঞাসাবাদে মামলার আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এই হামলা পরিকল্পনার ব্যাপারে একটি অত্যন্ত গোপনীয় ফাইল সংবাদপত্রটির কাছে রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বেশ কয়েকটি বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে আলোচনায় বসেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভূমি উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চোধূরী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনিদের একজন, জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের আল ইসলামীর দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুল ইসলামীর এক নেতা এবং হাওয়া ভবনের শীর্ষ এক ব্যক্তি। সেই দিনই শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেন তারা। পরদিন ১৫ আগস্ট একই জায়গায় আবার বৈঠকে বসে তারা। কিলিং মিশন কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয় সেদিন।ৃ এর পরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বেইলি রোডে, লুৎফুজ্জামান বাবরের সরকারি বাসভবনে। হাওয়া ভবনের সেই শীর্ষ ব্যক্তি সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। সেই দিনের বৈঠকেই প্রাথমিক খরচ মেটাতে হুজি নেতাদেরকে ৫০ হাজার টাকা হস্তান্তর করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ আগস্ট ২টি কালো জিপ নিয়ে আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় যায় বাবর। তার নির্দেশে বিএনপি নেতা ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমান আরিফ হুজি নেতাদের হাতে তুলে দেন ১ ডজন গ্রেনেড। এর মধ্যে দুইটি বাক্সে ৫টি করে মোট ১০টি গ্রেনেড এবং আলাদাভাবে প্যাকেট করা ২টি গ্রেনেড দেয়া হয়। বিস্ফোরক হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয় হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও পিন্টুর ছোটভাই মাওলানা তাজউদ্দিনের উপস্থিতিতে। হুজি সূত্রের তথ্যানুযায়ী এসব বিস্ফোরকের ওপর পিওএফের (পাকিস্তান অর্ডনেন্স ফ্যাক্টরিজ ) সিল ছিল। এরপর ২১ আগস্ট ৫ টা ২২ মিনিটে শুরু হয় সেই লোমহর্ষক লীল নকশার বাস্তবায়ন। বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে হামলায় অংশ নেয় হামলাকারীরা। হামলাকারীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ১৫ জন কর্মী ছিল।

ইতিহাস সাক্ষী, সত্যকে হাজারো মিথ্যা দিয়া ঢেকে রাখা যায় না, বিএনপি-জামায়াত জোট হাজারো মিথ্যা ও ছলচাতুরীর মাধ্যমেও এ সত্যকে ঢেকে রাখতে পারেনি। এক এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসাবে এ মামলাটিকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়। কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতোই সে সময় তদন্তে বিএনপি আমলে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। এবং তদন্তে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলার চার্জশীট দাখিলকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির বাদী হয়ে ২০০৮ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর পল্টন থানায় সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা এএসপি আব্দুর রশীদ, মুন্সী আতিকুর রহমান ও এসপি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহ ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায়ের অভিযোগ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়া জজ মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল হাসেম রানা জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডির সাজানো নাটকের কথা স্বীকার করে। ২০০৯ সালের ৩ আগষ্ট মামলাটি পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেয়। এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি বর্তমানে সিআইডির অতিরিক্ত এসপি আব্দুল কাহার আখন্দ তদন্ত করে এবং সে অনুযায়ী চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটে তারেক জিয়া, লুৎফর রহমান বাবরসহ বিএনপি-জামায়াত এবং হুজি নেতা মুফতি হান্নাননহ সিআইটির সাবেক দুই ডিজিকে আসামি করা হয়েছে। সেই চার্জশিট অনুয়ায়ী বর্তমানে ২১ আগস্ট লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার বিচারিক কাজ শেষ হয়েছে।

অবশেষে ২০১৮ সালে ১০ অক্টোবর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। আর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া এই ১৯ আসামির মধ্যে ১৩ জনই পলাতক।

আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। ২১ আগস্ট পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা মামলা রায় বাস্তবায়ন করে বুঝিয়ে দিতে হবে ষড়যন্ত্রকারীদের ইতিহাস কোন দিন ক্ষমা করেনি, কোন দিন ক্ষমা করবেও না।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)