অভিনেতা, নির্মাতা মীর সাব্বির পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘রাত জাগা ফুল’, মুক্তি পেল শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর)। বছরের শেষ দিনে দেশের ২৬টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই সিনেমা। ‘রাত জাগা ফুল’ এর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাটকের সহকর্মী অভিনেতা, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা মীর সাব্বিরকে শুভ কামনা জানিয়ে রীতিমত ভাসিয়ে দিচ্ছেন। সহকর্মীদে ভালোবাসায় আপ্লুত মীর সাব্বির নিজেও।
আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, তার সিনেমাটি দর্শক সাদরে গ্রহণ করবেন। নিজের প্রথম সিনেমা মুক্তির দিনটিকে ‘স্বপ্ন পূরণের দিন’ হিসেবেও দেখছেন তিনি। সেই সঙ্গে কথা বলেছেন সিনেমার অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়েও:
প্রথম সিনেমা পরিচালনা করলেন। নির্দিষ্ট করে যদি জানতে চাই প্রত্যাশা কী? রিস্ক মনে হচ্ছে?
সিনেমাটা মানুষ হলে এসে দেখুক এটাই প্রত্যাশা করি। একজন দেখলে অন্য দশজনের কাছে চলে যাবে। জীবনে চলার পথে কোথায় রিস্ক নেই? রিস্ক এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েই জীবন। পথ চলতে গেলে ভুল হবে। পড়ে যাবো, আবার উঠে দাঁড়াবো। নতুন করে ভুল শুধরে আবার চলা শুরু করবো। এটাই জীবন।
পরপর কয়েকটি ভালো ভালো সিনেমা মুক্তি পেলেও সিনেমা হলে সেভাবে চলেনি! ‘রাত জাগা ফুল’ যে চলবে, আপনি আত্মবিশ্বাসী?
ব্যক্তিগত জীবনে আমি খুব ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ। কোনোভাবে হতাশাগ্রস্ত নই। কোন সিনেমা মানুষ দেখেনি বা নেমে গেছে আমার ভালো জানা নেই। তবে আমি মনে করি আমার সিনেমাটি মানুষের দেখার সম্ভবনা বেশী। সিনেমায় যে ভালো ভালো উপাদান দরকার সেইসব উপাদান কিছু হলেও আমার সিনেমাতে বিদ্যমান। এই বিশ্বাস থেকে মনে হয় কেউ ‘রাত জাগা ফুল’ দেখে হতাশ হবে না। কেউ মন্দ ছবি বলবে না। আমি খুব পরিশ্রম করে আজ এই জায়গায় এসেছি। এবারও আত্মবিশ্বাসী। নির্মাণ হচ্ছে আমার নেশা। পরে এটি আমার পেশা, প্রেম ভালোবাসা। হোঁচট খেলেই থেমে যাবো মোটেও এমন না।
সিনেমা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রচারণার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। আপনি সেটাই করছেন…
আমি এটাকে কৌশল বলবো না। ‘শিখছো কোথায়, ঠেকছি যেথায়’ উক্তিটির কথা সবাই জানি। কলকাতা বা বলিউডের সিনেমা মুক্তির মার্কেটিং পলিসি দেখেছি। মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তারা বিভিন্ন স্ট্রেটেজি অবলম্বন করে। কিন্তু আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। শুধু প্রপার সিনেমা বানালে হবে না, এটা সঠিকভাবে মানুষকে জানাতে হবে। তাদেরকে আকৃষ্ট করতে হবে। আগের মতো এখন আর মাইকিং করে সিনেমা প্রচার করা হয় না। এখন ফেসবুকটাই মাইক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। চেষ্টা করছি যতভাবে মানুষকে ‘রাত জাগা ফুল’-এর কথা জানানো যায়। একবার মানুষ হল থেকে সিনেমাটি দেখুক।
‘রাত জাগা ফুল’-এর কিছু কিছু অংশ বা গানগুলো দেখে মনে হয়েছে এটা অনুদানের ৬০ লাখ টাকার চেয়ে বড় বাজেটে নির্মিত। বাকি অর্থ লগ্নী উঠে আসা আপনাকে চিন্তায় ফেলেছে?
আমি যেটা ভেবেছি সেটা সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেও করার চেষ্টা করেছি। কোথাও একটুও ছাড় দেইনি বলেই অনুদানের বাইরে বড় অংকের টাকা নিজের প্রডাকশন হাউজ থেকে খরচ করেছি। এতে কেউ কেউ বলেছে, যেটা খরচ করছো সেটা আদৌ ফেরত পাবা কিনা! তখন আমার মনে হয়েছে, গত ২০ বছর মিডিয়াতে কাজ করে টাকা নিয়েছি, তেমন কিছু দেইনি। তাই এটি আমার মিডিয়ার প্রতি আমার কনট্রিবিউশন। সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে ভালো গেলে আমি খুশী হবো। বাণিজ্য ভালো না হলেও অখুশি হব না। তখন ধরে নেব, এই সিনেমাটি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য আমার গিফট।
কয়েক শত নাটকে অভিনয় করেছেন, পরিচালনা করেছেন। কখন মনে হলো সিনেমা পরিচালনা করা উচিত?
২০০৬ সালে যখন প্রথম নাটক প্রযোজনা করি তখন স্বপ্ন দেখি সিনেমা বানাবো। শ্রদ্ধেয় পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, এটিএম শামসুজ্জামান, নরেশ ভুঁইয়া, ডলি জহুর ছাড়াও বহু গুণী মানুষ আমার পরিচালনায় কাজ করেছেন। তারা আমাকে সবসময় বলতেন, সাব্বির সিনেমা বানা। তুই ভালো করতে পারবি। তাদের কথায় আরও বেশী উজ্জীবিত হতাম। সিনেমা নির্মাণের বীজটা তখনই নিজের মধ্যে বুনে ফেলি।
সিনেমা নিয়ে আগামীতে কী ভাবছেন?
অভিনয়ের কথা বললে মনের মতো সিনেমা করার সুযোগ পাইনি বলে করিনি। আর পরিচালনার ক্ষেত্রে আগামীতে আরেকটি সিনেমার গল্প মাথায় এসেছে। সিনেমাটির নাম ‘স্বর্পগন্ধা’। এটি একটি ফুলের নাম। এখনও চিত্রনাট্য করিনি। তবে গল্পটা তৈরি করেছি। এটা হবে আমার পরের সিনেমা।