রিয়ালের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যখন প্রথমবার পা রাখেন সার্জিও রামোস, তার বয়স সবে ১৯ বছর। না ছিল তারকা খ্যাতি, না ছিল নামের পাশে বড় কোনো খেতাব। পরের বছরগুলোতে সবকিছুর স্বাদ পেয়েছেন। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইউরোপ-স্পেনে, লস ব্লাঙ্কোসদের জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা, জিতেছেন মাদ্রিদিস্তাদের মন।
শেষ হতে চলা বছরটা খুব একটা ভালো কাটল না ‘দ্য গ্ল্যাডিয়েটর’খ্যাত রামোসের। চোট সমস্যা নিয়ে পিএসজিতে এসে একাদশে হতে পারেননি নিয়মিত। বছরের শেষটা হল লাল কার্ডে। সবমিলিয়ে বললে, অপয়া একটা বছর কাটালেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। ভুলে যেতে চাওয়ার মতোই একটা বছর।
জানুয়ারি— চোট জর্জরিত একমাস
গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে চেলসির মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল। চোটের আগে সেটিই ছিল রামোসের শেষ ম্যাচ। চোট সমস্যায় শুরু হয়েছিল নতুন বছর। জানুয়ারির ২ তারিখে দেখা দেয় পেটে সমস্যা। মাসের মাঝের দিকে সুপার কোপা ডি এস্পানায় রিয়ালের ২-১ গোলে হেরে যাওয়ার দিনে বাম হাঁটুতে চোট পান।
ফেব্রুয়ারি— অস্ত্রোপচার টেবিল
জানুয়ারির মাঝামাঝিতে পাওয়া হাঁটুর চোট ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শেষে কাঁচির তলে বসতে হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। যা তাকে বাধ্য করে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে।
মার্চ— বিদায় জাতীয় দল!
কাতার বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই ম্যাচগুলো জাতীয় দলের হয়ে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন। ইনজুরি সমস্যা তাকে ছিটকে দিয়েছে। ১৩ মার্চ এলচের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত করেন ও তিনদিন পর আটলান্টার বিপক্ষে মাঠে নামেন।
বাছাইপর্বে জর্জিয়া ও কসোভার বিপক্ষে ‘টেকনিক্যাল ডিসিশনের’ কারণে মাঠের বাইরে কাটান স্প্যানিশ তারকা। পরে গ্রিসের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে ফেরেন। যদিও সে ম্যাচের পর আবারও ইনজুরিতে পড়েন। এখনও জাতীয় দলের বাইরে আছেন।
জুন— বিদায় রিয়াল মাদ্রিদ
‘কখনও ছেড়ে যেতে চাইনি’ বলে ১৭ জুন, ২০২১ সালে পিএসজিতে পা রাখেন রামোস। রিয়ালের সঙ্গে নতুন মৌসুমে চুক্তি নবায়নে প্রস্তুত ছিলেন। তবে রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে বনিবনা হয়নি। চেয়েছিলেন দুবছরের চুক্তি, পাননি। এক বছরের বেশি দিতে চায়নি রিয়াল।
জুলাই — হ্যালো প্যারিস
গুঞ্জন শেষ, দুবছরের চুক্তিতে নেইমারদের ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন। ফরাসি ক্লাবটিতে যোগ দেয়ার পর লেখেন, ‘স্বপ্ন দেখার সেরা জায়গা, জেতার সেরা ক্লাব। আমরা সবকিছুর সাথে যুদ্ধ করবো।’
নভেম্বর— অনেক নাটকের পর অভিষেক
রিয়াল ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়ার পর ইনজুরিতে কেটেছে অনেক দিন। আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর— অবশেষে ৪ মাস ২০ দিন পর সেন্ট এতিয়েনের বিপক্ষে লিগ ওয়ানে অভিষেক। মেসির রেকর্ডের ম্যাচে পিএসজি জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে।
ডিসেম্বর— খারাপ বছরের শেষ খারাপ
পিএসজি জার্সিতে মৌসুমটা একেবারে যাচ্ছেতাই গেল। শেষটা রামোসের জন্য আরও বেশি খারাপের। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে লরেন্টের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। পিএসজিতে যেটি ছিল তার দ্বিতীয় ম্যাচ। বদলি হয়ে নামেন ৪৬ মিনিটে। ক্লাবটির জার্সিতে লিগে দুই ম্যাচ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৩০ মিনিট খেলেছেন সবে। তাতেই প্রথম লাল কার্ড দেখে ফেলেছেন।
চোট, ইনজুরি, আর না পাওয়া ছাপিয়ে বছরটা চলে যাওয়ায় দুয়ারে থাকায় রামোস যতটা খুশি, ততটা হয় খুশি নয় অন্যকেউই! সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মুখিয়ে নতুন বছরে নতুনভাবে শুরু করতে!