২০১৬ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ পাক সেনা যুদ্ধাপরাধীর প্রতীকী বিচার হবে বলে ঘোষণা করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। ওইসব কুখ্যাত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতেই এই গণবিচারের আয়োজন বলে জানান মন্ত্রী।
শুক্রবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় স্বাধীনতা হলে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নৌ পরিবহনমন্ত্রী। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নবগঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আহ্বান কমিটি।
মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর ইস্যুতে পাকিস্তান সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থান দু’দেশের মধ্যে চলছে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। পাকিস্তানের অবস্থানে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ, ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে তলব করলে, পাকিস্তানও তলব করে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনকে নব্য ‘কাশিমবাজার কুঠি’ হিসেবে উল্লেখ করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান।
এর পাশাপাশি পাকিস্তান হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ ইস্যুতে দু’দেশের সম্পর্ক করে তুলেছে আরও দুর্বল। এমন সময় পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া ১৯৫ জন যুদ্ধারাধীর বিচার দাবি করেছে সর্বস্তরের মানুষ।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, “পাকিস্তান দূতবাসের কর্মকর্তা মাজহার খান, সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ বাংলাদেশের ভেতরে জঙ্গি নেটওয়ার্কেও প্রসার ও জালমুদ্রা ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে তৎপর তারা। পাকিস্তান দূতাবাস এখন ষড়যন্ত্রের আখড়া নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে”।
বক্তারা বলেন, পাকিস্তান সরকারের হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনেও তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তার বিচার হয়নি।
নৌ পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, “১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনার বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিলো। তাদের বিচার করতে পাকিস্তানের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে জনমত গঠন করা হবে। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের আর্থিক পাওনা বুঝে নিতেও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষ জনতার সামনে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনার প্রতীকী বিচার করা হবে”।
পাকিস্তান যাদের ‘সাচ্চা পাকিস্তানি’ হিসেবে দাবি করেছেন তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের পাশাপাশি ধর্মের নামে সহিংসতা করায় জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশকেও নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান।
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানি সেনা ও দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার। ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণসংযোগ, ৩ জানুয়ারি ২০১৬ মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ এবং ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল ও কার্যকর করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ শিরিন আখতার, মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, অভিনেত্রী শমী কায়সার, অঞ্জন রায়, কামাল পাশা চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।