যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন: ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড না; ১৫ আগস্ট ছিল পুনরায় পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার নীলনঁকশা। ১৫ আগস্ট ছিল একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, বাঙালির স্বাধীকারকে অস্বীকার করার প্রয়াস।
সোমবার সাভার সরকারি কলেজ মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা জেলা যুবলীগ আয়োজিত ১০০০ অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ভোরে আমি আমার স্বজনদেরকে হারিয়েছি। মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবা-মায়ের রক্তাক্ত দেহ অতিক্রম করে এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছিলাম। আশ্রয়ার্থী হয়ে বিভিন্ন বাসাতে পালাতে হয়েছিল সে ভয়াল আগস্টে, নিজের জীবন বাঁচাতে। সেদিন হারিয়েছিলাম আমার বাবা আপনাদের নেতা ১৯৬০-৬৪ তুখোড় ছাত্রনেতা আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের কর্ণধার, মুজিব বাহিনীর প্রধান, একাধারে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিক আপনাদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও আমার মা আরজু মণি সেরনিয়াবাতকে। হারিয়েছি আমার নানা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী পরিষদের সদস্য। সর্বোপরি আমরা সপরিবারে হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তিনি আরও বলেন-শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেই নয়, সেই সাথে সেদিন একটি আদর্শ ও মূল্যবোধ্যের সমাধি হতে দেখেছি। কবর দেওয়া হয়েছে দেশপ্রেম ও মেধাভিত্তিক রাজনীতির। এ সকল কারণে এই আগস্ট মাসটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হলো সেই নেতা যিনি জন্ম গ্রহণ না করলে প্রিয় মাতৃভূমিও পেতাম না, জাতীয় সঙ্গীতও হতো না। বাংলার শোষিত, নিপীড়িত, মেহনতী মানুষের হাহাকার, দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মধ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাই। তাই ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড না; ১৫ আগস্ট ছিল পুনরায় পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার নীলনঁকশা। ১৫ আগস্ট ছিল একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, বাঙালির স্বাধীকারকে অস্বীকার করার প্রয়াস। ১৫ আগস্ট ছিল আমাদের আত্মপরিচয়ের উপর আঘাত করা। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ করেছিল, ঠিক সেই ভাবে ’৭৫-এ ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্দোষ, নিরীহ, নিরস্ত্র পরিবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘাতকচক্ররা। যেমনটা ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন-বাঙালির মুক্তির মহানায়ক যখন ক্ষত-বিক্ষত দেশটাকে পুর্নগঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন ঠিক তখনই ঘটানো হয়েছিল ইতিহাসের নির্মম, জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। জাতির পিতাকে হত্যা করা সহজ নয়, মুজিব অবিনশ্বর, মুজিব চিরন্তন। বঙ্গবন্ধু এদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আজকে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। সামনের বছর দেশবাসী এর সুফল পাবেন ইনশাআল্লাহ। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে নেত্রীর দেখানো পথে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা, আজ আগস্টের এই কর্মসূচি থেকে শক্তি সঞ্চার করে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি করে মানুষের সেবা করার শপথে আবদ্ধ হয়েছে।
অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান এমপি বলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সততাই শক্তি, মানবতাই মুক্তি স্লোগান নিয়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আজ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামাত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা ষড়যন্ত্র ও হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন করোনার মহামারির সময় থেকে আজ পর্যন্ত যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও মহানগরের প্রতিটি নেতা-কর্মী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা করোনার এই সময়ে ফ্রি মেডিসিন সেবা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফ্রি অক্সিজেন সেবা, করোনা আক্রান্ত করোগী ও অন্যান্য রোগীর সেবা, করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন/সৎকার করা, অসহায় কৃষকের জমির ধান কাটাসহ সকল ধরণের মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে যুবলীগ।