১৩ বছরেও শেষ হয়নি প্রথাবিরোধী লেখক,গবেষক, দার্শনিক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার। জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছে না। এ কারণে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। সাক্ষীর অভাব কিংবা বিচারক ছুটিতে এমন নানা অজুহাতে এক যুগ পরেও দেশের এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার থমকে আছে। জার্মানিতে তাঁর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিলো তাও রহস্যাবৃত।
‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসের লেখকের ওপর হামলায় কারা ইন্ধন দিয়েছিলো, এমন জবাব নিজেই দিয়েছিলেন চাপাতি-কুড়ালের আঘাতে মারাত্মক জখম হুমায়ুন আজাদ। হামলার দীর্ঘ ২৪ দিন পর তাঁর জ্ঞান ফিরলে আক্রমণকারীদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তৎকালীন সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকেই প্রশ্ন করতে বলেছিলেন।
২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন সংসদ সদস্য কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী জাতীয় সংসদে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৩) বইটিকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে এক লম্বা বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
২৩ মার্চ জ্ঞান ফিরলে ড. আজাদ এক সংবাদ সম্মেলনে দুটি সংবাদপত্র ও সাঈদীকে তাঁর ওপর হামলার জন্য দায়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘যেভাবে দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক সংগ্রাম আমার বিরুদ্ধে লিখছিল এবং সাঈদী সংসদে আমার বিরুদ্ধে যা বলেছেন তা এই হামলার সঙ্গে তাদের সংযোগের ইঙ্গিত দেয়। জানিনা রাষ্ট্র এ বিষয়ে সংগ্রাম, ইনকিলাব বা সাঈদীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন’।
অথচ এখনো সাক্ষীর অভাব কিংবা বিচারক ছুটিতে এমন নানা কারণে এক যুগ পাড় হলেও দেশের এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার থমকে আছে। জার্মানিতে তাঁর মৃত্যু কিভাবে হয়েছিলো তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
আলোচিত এই মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলায় ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ৩৮ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী দুই ডাক্তারসহ ২০ জন বাকী রয়েছেন। তারা সাক্ষ্য দিলেই মামলার কার্যক্রম শেষ করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ড. হুমায়ুন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
ওই হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসারত ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন, জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। এদের মধ্যে আসামি নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু পলাতক।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে মামলার দুই আসামি সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহমুদকে ছিনিয়ে নেয় কথিত দুর্বৃত্তরা। পরে এদের মধ্যে রাকিব ওইদিন রাতেই ধরা পড়েন এবং পরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।