চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

১২ মাসে ৪৫ ছবি: ব্যবসাসফল মাত্র একটি

বাংলা চলচ্চিত্র আরও একটি ‘খারাপ বছর’ পার করলো। দেশের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, চলতি বছর মুক্তি পেয়েছে মোট ৪৫টি দেশিয় সিনেমা। এরমধ্যে রয়েছে ২টি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। এছাড়া ১০টি সিনেমা কলকাতা থেকে আমদানি করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট মুক্তি পেয়েছে ৫৫টি।

২০১৯ সালের প্রথম শুক্রবার ছিল ৫ জানুয়ারি। ওইদিন মুক্তি পায় ‘আই এম দ্য রাজ’। এ ছবির সঙ্গে ছিল আমদানিকৃত সিনেমা ‘বিসর্জন’। বছরের শেষ শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর। এ দিন মুক্তি পেল ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’, ‘পঞ্চসঙ্গী’ এবং ‘কাঠবিড়ালী’।

প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি বলছে, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ৪২টি দেশিয় সিনেমা। ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পেল তিনটি সিনেমা। ঈদ ছাড়া একদিন তিনটি সিনেমা মুক্তির নিয়ম নেই। ‘কাঠবিড়ালী’ সিনেমাটি একটি স্থানে প্রদর্শনের জন্য অনুমতি নিয়েই মুক্তি দিয়েছে।

চলতি বছর মুক্তি পাওয়া সবগুলো সিনেমার মধ্যে ব্যবসা সফল হয়েছে একমাত্র সিনেমা ‘পাসওয়ার্ড’! যেটি মুক্তি পেয়েছিল রোজার ঈদে (৫ জুন)।

মালেক আফসারী পরিচালিত সুপারস্টার শাকিব খান প্রযোজিত এ সিনেমাটি দর্শক গ্রহণ করেন। সিনেমায় শাকিব খান ছাড়াও অভিনয় করেন শবনম বুবলী, ইমন, মিশা সওদাগর প্রমুখ। আধুনিক নির্মাণ, মুক্তির আগে সিনেমায় গানগুলোর জনপ্রিয়তা, নতুন ফরম্যাটে গল্প এবং শাকিব খানের প্রযোজনা। সবকিছু মিলিয়ে ‘পাসওয়ার্ড’ দেখতে সিনেমা হল দর্শকদের ঢল নামে। আর সে কারণে, এই একটি মাত্র সিনেমায় চলতি বছর ঢালিউডকে সমৃদ্ধ করেছে।

‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমার সাফল্য প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক শাকিব খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দেশের প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মুখেও ‘পাসওয়ার্ড’ হাসি ফুটিয়েছে। এ অর্জন আমার একার কিছু নয়, আমার ভক্ত ও দেশের সিনেমাপ্রেমী সকল দর্শকেরাই এই সফলতার সবচেয়ে বড় দাবিদার। আমি শুধু আমার অবস্থান থেকে দর্শকদের কাছে ভালমানের সিনেমা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র। দর্শক আমাকে যেভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে এটা পেলেই আমি আমার অবস্থান থেকে বাংলা সিনেমাকে আরও সমৃদ্ধ করা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

শুধুমাত্র ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমা ব্যবসা সফল হলেও একাধিক সিনেমা ছিল আলোচনায়। তার মধ্যে কিছু সিনেমা দর্শক পছন্দ করলেও ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। চলতি বছর প্রশংসিত হওয়া সিনেমার মধ্যে ছিল ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ফাগুণ হাওয়ায় (১৫ ফেব্রুয়ারি), যদি একদিন (৮ মার্চ), লাইভ ফ্রম ঢাকা (২৯ মার্চ), আলফা (২৬ এপ্রিল), নোলক (৫ জুন) আবার বসন্ত (৫ জুন), আব্বস (৫ জুলাই), মনের মতো মানুষ পাইলাম না (১২ আগস্ট), বেপরোয়া (১২ আগস্ট), মায়াবতী (১৩ সেপ্টেম্বর), সাপলুডু (২৭ সেপ্টেম্বর), ইতি তোমার ঢাকা (১৫ নভেম্বর), ন ডরাই (২৭ নভেম্বর)।

এ ছবিগুলোর মধ্যে ‘আব্বাস’ ব্যবসায়িক সাফল্য ছুঁয়েছে বলে দাবী করেছেন নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা। তারা বলছেন, কম বাজটের আব্বাসের ডিজিটাল শর্ত, স্পন্সর সবমিলিয়ে ভালো টাকা উঠেছে। তবে সিনেমা হল থেকে সেই পরিমাণ ব্যবসা করেনি। আরেক আলোচিত সিনেমা ‘যদি একদিন’ দেশের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শিত হয়েছে। ‘নোলক’ নামের আরেক আলোচিত ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। নির্মাণের শুরু থেকে নানা জটিলতায় পড়ে ‘নোলক’। সে কারণে মুক্তি দিতেও দেরি হয়। বৈশাখের সিনেমা ঈদে মুক্তি দেওয়ায় দর্শক এ সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এছাড়া গল্পের সামঞ্জস্য না থাকায় নোলকের ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখেনি।

কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমাটিও দর্শকের মনোরঞ্জন করতে পারেনি। একই চিত্র দেখা গেছে জাজের ‘বেপরোয়া’ সিনেমাতে। নির্মাণ আধুনিক হলেও রিমেক সিনেমা হওয়ায় দর্শক সেভাবে গ্রহণ করেনি রোশান-ববির এ সিনেমাটি। বছরের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত সিনেমা ‘সাপলুডু’-ও প্রত্যাশিত ব্যবসা করতে পারেনি। নভেম্বরের শেষে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ন ডরাই’ ঢাকা সিনে থিয়েটারে চললেও মফঃস্বলের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দর্শক টাকতে ব্যর্থ হয়।

প্রসংশিত হওয়া দেশিয় এসব সিনেমার বাইরে যেগুলো পেয়েছে সবগুলোই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর কারণ, ওইসব সিনেমাগুলো ছিল মানহীন এবং সময় অনুপযোগী। চলতি বছর চিত্রনায়ক বাপ্পীর দুই ছবি ‘দাগ হৃদয়ে’ ও ‘ডনগিরি’ চরমভাবে ব্যবসায়িক বিপর্যয় হয়েছে। ‘দাগ হৃদয়ে’ সিনেমার প্রযোজক কামাল আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনে বলেছেন, ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ছবিতে ১ কোটি টাকাই লোকসান হয়েছে। আরেক সিনেমা ‘ডনগিরি’ও খরচের অর্ধেক টাকা তুলতে সক্ষম হয়নি।

চলতি বছর মুক্তি পাওয়া আমদানিকৃত ১০টি সিনেমার ভাগ্য আরো খারাপ। মুক্তি পাওয়া আমদানির সিনেমাগুলো হচ্ছে বিসর্জন (৫ জানুয়ারি), ভোকাট্টা (২৮ জুন), কিডন্যাপ (১২ জুলাই), শেষ থেকে শুরু (১৯ জুলাই), বিবাহ অভিযান (২৬ জুলাই), প্যানথার (৬ সেপ্টেম্বর), বচ্চন (১১ অক্টোবর), কণ্ঠ (৮ নভেম্বর), পাসওয়ার্ড (২৯ নভেম্বর), জানবাজ (২২ নভেম্বর)। এর মধ্যে একটি সিনেমাও এদেশ থেকে ব্যবসা করতে পারেনি। যথাযথ প্রচারণার অভাব, ইউটিউবে পাইরেসিই এ সিনেমা বাংলাদেশে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার নওশাদ বলেন, শুধুমাত্র একটি হিট সিনেমা (পাসওয়ার্ড) দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকতে পারে না। ইন্ডাস্ট্রি টেকাতে হলে কমপক্ষে ১০-১২টি হিট সিনেমা প্রয়োজন। মানুষ যেমন খাদ্য না হলে বাঁচতে পারেনা, তেমনি সিনেমা হলও নতুন নতুন সিনেমা ছাড়া টিকে থাকতে পারেনা।

তিনি আরো বলেন, ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা রাখলে হলে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুটি করে সিনেমা মুক্তি দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র দেশের সিনেমা সংকটের কারণে আমরা বাইরের সিনেমা আমদানির পক্ষে। নতুন সিনেমার অভাবে চলতি বছর আরও হল কমে ১৫০ তে এসে ঠেকেছে। এ বছর যতগুলো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে বেশিরভাগ সিনেমাই ছিল মানহীন। বিশ্বায়ন ও আকাশ সংস্কৃতির এ যুগে বাইরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সিনেমা না করলে দর্শক কোনো সিনেমা গ্রহণ করবে না।