কক্সবাজার থেকে: ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ হিসেবে ১০০ বলের ম্যাচের কথা ভাবছে ইংল্যান্ড। ২০২০ সাল থেকে সেখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটে চালু হতে পারে এটি। তার আগেই ইংলিশদের ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। অবশ্য সিরিয়াস ক্রিকেটে নয়; সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালে। বুধবার কক্সবাজারে শুরু হওয়া পাঁচ দলের আসরে উদ্বোধনী দিনে রোমাঞ্চ ছড়াল ১০ বলের ওভারও।
শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী দিনে ভিন্নধর্মী এক নতুনত্বের সঙ্গে নাম জড়ালেন এনামুল হক মনি। ১০ টেস্ট ও ২৯ ওয়ানডে খেলা বাঁহাতি স্পিনার ১০০ বলের ক্রিকেটে ১০ বলের ওভার করা প্রথম ক্রিকেটার। এয়ার এশিয়া রাজশাহী মাস্টার্সের হয়ে সিলেট সিক্সার্স মাস্টার্সের বিপক্ষে ইনিংসের দশম ওভারে এসে দশ বলের ওভারটি করেন এনামুল। ১০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। পরপর দুই বলে শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও তৌহিদ আহমেদকে সাজঘরে পাঠিয়ে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও।
ম্যাচ ১৫টি স্বাভাবিক ওভার, সঙ্গে ১০ বলের একটি ওভারের। চাইলে সর্বোচ্চ তিনজন মিলে করতে পারবেন ১০ বলের ওভারটি। তবে সেটি হতে হবে পাওয়ার প্লে’র ৫ ওভার শেষ হওয়ার পরবর্তী যেকোনো সময়ে। রাজশাহীর অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ভরসা রাখেন এনামুলের উপর। বিশেষ এই ওভারকে আক্ষরিক নাম দেয়া হয়েছে ‘মাস্টার ওভার’। একটু খরুচে হলেও দুই উইকেট নিয়ে দারুণ মাস্টারি করেছেন এনামুলও।
সিলেটকে ১১২ রানে আটকে পরে ১৫ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে রাজশাহী। আনিসুল রহমান ৩৭, এহসানুল হক সেজান ২৬ ও খালেদ মাসুদ পাইলটের অপরাজিত ১৯ রানে ১৪.১ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ে নোঙর ফেলে রাজশাহী।
টস হেরে আগে ব্যাট করা সিলেটের হয়ে ৫১ রানের ইনিংস খেলেন আনিসুল হাকিম খান। শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ১৯ ও অধিনায়ক হাসিবুল হোসেন শান্ত করেন ১৫ রান।
সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টের ভেন্যুতে তীব্র গরম, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার বিরক্তি ছাপিয়ে সাবেকদের ছুঁয়ে যায় নতুন ফরম্যাটের রোমাঞ্চই। ইংল্যান্ডে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও বাংলাদেশে মাঠে গড়িয়েছে নতুন যে সংস্করণ, তার সাক্ষী হতে পারার রোমাঞ্চ সাবেক ক্রিকেটারদের মিলনমেলাকে আরও বেশি উষ্ণতায় ডুবিয়ে দিয়েছে।
১০০ বলের ম্যাচে ১০ বলের ওভার নিয়ে সাবেক ক্রিকেটার নাসিউরউদ্দিন আহমেদ নাসু চ্যানেল আই অনলাইনকে বললেন, ‘এটা একইসঙ্গে উপভোগ্য ও চ্যালেঞ্জিং। কারণ এই ফরম্যাটে আগে কেউ কোনোদিন খেলেনি। কখন ওভারটি করবে, কীভাবে করবে, সেটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। উপভোগ্যও। যেহেতু একটি নতুনত্ব আসছে। সবার মধ্যে ভিন্ন এক অনুভূতি।’
নাসিরউদ্দিন আহমেদ মাস্টার্স ক্রিকেটে খেলছেন রাজশাহীর হয়ে। ১০০ বলের ম্যাচের প্রয়োগ এরকম ফানি ক্রিকেটেই বেশি খাটে বলে মনে করেন তিনি।
‘ফানি গেমের মধ্যে করা যায়। কিছুদিন যাওয়ার পর বোঝা যাবে কতটা আবেদন আছে। খুব খারাপ লাগছে না। ১০ বলের ওভারে পাঁচের জায়গায় চার ফিল্ডার ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকছে। বোলার পরিবর্তনের ব্যাপার আছে। টি-টুয়েন্টি যখন প্রথম এলো, ব্যাটিং পাওয়ার-প্লে, বোলিং পাওয়ার-প্লে’র ব্যাপারটি অধিনায়কের উপর ছিল। এটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল। ধীরে ধীর সহজ হয়ে এসেছে।’
সাবেক বাঁহাতি পেসার দীপু রায় চৌধুরী মনে করেন ফানি ক্রিকেটে এই নিয়ম প্রয়োগ হতে পারে তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যুক্ত হবে কিনা সেটি সময় ও জনপ্রিয়তার উপরই ছেড়ে দিতে হবে।
‘আমাদের মতো যারা সাবেক, তাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে যে কম ওভারের খেলা। ফরম্যাট সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে জনপ্রিয় করার জন্যই। তবে আসল গেমে যদি বলেন, সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট হিসেবে ওয়ানডে আদর্শ। ৫০ ওভারের ম্যাচ বেশ প্রতিযোগিতামূলক। আর টি-টুয়েন্টি তো এমন পাবলিকের জন্য যারা চার-ছক্কা দেখতে চায়। তারা চায় ২০০ হোক আবার ওটা পরে ব্যাট করা দল টপকেও যাক। জনপ্রিয়তা ও অল্প সময়ের মধ্যে উপভোগ্য করার জন্যই বোধহয় এই ফরম্যাট চালু করা। এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে। যদি সবাই গ্রহণ করে, তাহলে টি-টুয়েন্টির সঙ্গে আলাদা একটা ফরম্যাট হিসেবে যোগ হতে পারে।’
মাস্টার্স কার্নিভালে পাঁচ দলের আসরে সবাই একে অপরের বিপক্ষে খেলবে লিগপর্বে। সেরা দুই দল উন্নীত হবে ফাইনালে। টুর্নামেন্টের ফাইনাল ৫ মে। ভেন্যু থেকে ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করছে চ্যানেল আই।