চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হয় নির্বাচন, নয় অগণতান্ত্রিক শক্তি

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর নেতা রাসেল আহমেদ খানকে বিএনপি জামাত জঙ্গিরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে৷ রাসেল আহমেদ ছিল আদর্শিকধারার একজন নিবেদিত প্রাণ নিরীহ রাজনৈতিক কর্মী৷ লগি বৈঠা নিয়ে রাজপথে হাজির হওয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি রাজপথে হাজির হয়েছিলেন৷ আঁকড়ে থাকা ও ক্ষমতা ছাড়ার মুহূর্তে কেন এই খুনোখুনি? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই জোটেরই রাজপথে পেশি শক্তি প্রদর্শন কি খুব জরুরী ছিল? দেশজুড়ে শুরু হয় সংঘাত৷ জেলা,উপজেলা ও প্রত্যন্ত পল্লীতে শুরু হয় দুইজোটের একে অপরের মারমুখী আচরণের উলঙ্গ প্রকাশ৷ নেত্রকোনার মোহন গঞ্জে আমি সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম৷ শহরটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। একভাগ চার দলের আরেকভাগ ১৪ দলের৷ মহিলা কলেজ রোড ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে বিএনপি নেতা ইমরান খান চৌধুরী ও মিহির গোস্বামীর বাসায় হামলা চালাল৷ শিবির বাজারের ইদ্রিস আলী বিডিআরের স্ত্রী তার ছাত্রলীগ করা ছেলেকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল৷ মারামারির এক পর্যায়ে আমি দৌড়ে মহিলা কলেজ রোডে মিজানুর রহমানের বাসায় গিয়ে উঠলাম৷ পাশেই বিএনপি নেতা মিহির গোস্বামীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চলছিলো তখন৷ মহিলা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ও কাঁদতে কাঁদতে আমার সঙ্গে এল৷ আমরা তখন দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে থেকে ভাঙচুরের শব্দ শুনলাম৷ এই বাসায় আশ্রয় নেয়ার সময় ভাবিনি বাসার মালিক কোন দলের সমর্থক? পরে যখন মাথায় এলো বাসার মালিক বিএনপি সমর্থক তখন মারাত্মক ভয় কাজ করছিল৷ সে সময় মোহনগঞ্জে খুন হয় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর কাসিম আকন্দ৷ মীর কাসিম একজন নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগার ছিল৷ সে ছিল নিরীহ শান্ত গোছের ভদ্রলোক৷ মারামারি, সংঘাত তথা পেশিশক্তি প্রদর্শন সে এড়িয়ে চলতো৷ দলীয় আহবানে সাড়া দিয়েই তিনি রাজপথে গিয়েছিলেন৷ সেদিনের ২৮ অক্টোবর বিএনপি জামাতের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ৩০ অক্টোবর মারা যান মীর কাসিম আকন্দ৷ যে কোন সংঘাতেই আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটে থাকে৷ বিএনপি জামাত জোটের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার মুহূর্তে এমন পেশিশক্তি প্রদর্শন কি না করলে হতো না? এতে কি রাজনৈতিক কোন লাভ হলো?

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট৷ সরকারী মদদে বেপরোয়া হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠী৷ একযোগে ৬৩ টি জেলায় বোমা হামলা, আদালতে হামলা,বাংলা ভাই ও শায়ক আব্দুর রহমানের উত্থান, ট্রাকভরে অবৈধ অস্ত্রের আমদানি, তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা প্রভৃতি ঘটনা ঘটে৷ ৪ দলীয় জোট সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও সাম্যবাদী দল প্রভৃতির মাধ্যমে গড়ে ওঠে ১৪ দলীয় জোট৷ রাজপথে এই জোটটি সক্রিয় ছিল৷ কিন্তু তাদের শত আন্দোলনেও মেয়াদের আগে যেহেতু ৪ দলীয় জোট কে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে কি লগি বৈঠার মিছিল অনিবার্য ছিল? যুব মৈত্রীর নেতা রাসেল আহমেদ খান ১৪ দল সমর্থক যুব নেতা হিসাবেই লগি বৈঠার মিছিলে গিয়ে জামাত শিবিরের হাতে মৃত্যুবরণ করেন৷ এই সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে জামাত জঙ্গীদেরও৷ যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের ফলাফল মৃত্যু ডেকে আনলে তাকে কি সুস্থধারার লড়াই বলা যায়? লগি বৈঠার মিছিল না দিলে চারদলীয় সরকার কি ক্ষমতা হতে নামতো না? দুই জোটের সংঘাতে ও বিএনপি অনুগত রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন কে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপ-চেষ্টায় দেশে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিল৷ ক্ষমতা ফসকে দুই জোট ছেড়ে চলে গেল সেনানিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দিন সরকারের হাতে৷

সড়ক পরিবহন-ধর্মঘট-বাস

কথিত মাইনাস টু ফর্মুলায় দুই নেত্রী জেলে গেল৷ দুই জোটের পরস্পর বিরোধী অবস্থানই তখনকার মাইনাস টুর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল৷ ২০০৬ এ ফখরুদ্দিনরা ক্ষমতায় না এলে আরও রক্ত ঝরতো৷ এককথায় তখনকার পরিস্থিতিই ফখরুদ্দিনের ক্ষমতায় আসা কে অনিবার্য করে তুলেছিল৷ তখন দুই দলেই সেনানিয়ন্ত্রিত শাসনকে সমর্থনকারী সংস্কার পন্থী গ্রুপের আবির্ভাব হয়৷ সম্প্রতি ৮ জন সংস্কারপন্থী বিএনপি নেতা আবার বিএনপিতে ফিরে এসেছেন৷ নির্বাচনের আগে আগে তাদের কেন এই ফেরা? আবার বিএনপির কয়েকজন নেতা চলে গেল বিকল্প ধারায়৷ বিএনপি যেন অপেক্ষা করছে সংসদ ভেঙ্গে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে আর ২০০৬ সালের লগি বৈঠার মিছিলের জবাব দেবে৷ বিএনপির কিছু নেতার হুমকি ধমকি তে এমন আশঙ্কাই ফুটে উঠছে৷ একাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা তেমন সুবিধা করতে পারবেনা জেনেই বড় দল হয়েও ছোট দলের সাথে মিশে ছোট দলের নেতাকে প্রধান নেতা মেনে রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছে৷ আর প্রধান নেতা বারবার বক্তৃতায় বিএনপি চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কথা বলতেই ভুলে যাচ্ছেন৷ তিনি এ ও বলছেন তার সাথে তারেক রহমানের কোনো সম্পর্ক নেই৷ অথচ তারেক রহমান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান৷ তিনি আরও বলছেন তাদের ঐক্যফ্রন্টের সাথে জামাতের কোন সম্পর্ক নেই৷ অথচ জামাত বহাল তবিয়তে ২০ দলীয় জোটে রয়েছে৷ ২০ দল বলছে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে আছে ও থাকবে৷ সুতরাং ২০ দলের সাথে জামাতের যদি কোন বৈঠক হয় আর তাতে যদি জামাতের কোন প্রতিনিধি থাকে তখন ঐক্যফ্রন্ট কি সে বৈঠক বর্জন করবে? মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন৷ পরবর্তীতে দলের দুঃসময়ে তিনি হয়ে ওঠেন সংস্কার পন্থী গ্রুপের একজন৷ সংস্কার পন্থীদের অনেকেই ভোল পাল্টে ফের আওয়ামী লীগে মিশে যান৷ মান্না মিশেননি অথবা মিশতে পারেননি৷ নাগরিক ঐক্যের ব্যানার নিয়ে তিনি মিশে গেলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে৷ উদ্দেশ্য কি নির্বাচনে জেতা নাকি ওয়ান ইলেভেনের মত আরেকটি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে স্বাগত জানানো?

নির্বাচন নিকটবর্তী হলে অনেক নাম সর্বস্ব ও প্যাড সর্বস্ব দলের আবির্ভাব হয়৷ ওয়ান ম্যান ওয়ান পার্টিও হয়ে যায় জোটের নেতা ৷ ঢাকায় কর্মসূচি করতে হলে কর্মীর প্রয়োজন হয়না৷সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণের সামনে ঘোরাঘুরি করলেই মানুষ সাপ্লাইয়ের ঠিকাদার পাওয়া যায় ৷ আমি এমন একজনকে কথাচ্ছলে বলেছিলাম,আমরা প্রেসক্লাবে একটা সমাবেশ করব কিছু লোক দরকার৷ তখন বলল,কতজন দরকার বলেন৷ লোক আছে৷ বক্তৃতা দেয়ার লোক দরকার হলে তাও আছে৷ এসব ঠিকাদাররা এভাবে বিভিন্ন সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে মানুষ সাপ্লাই দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে৷ নির্বাচন নিকট বর্তি হলে এসব ঠিকাদারদের আয় বৃদ্ধি পায়৷ ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ৩১ দলীয় জোট,কিছু বাম জোট, এরশাদের জোটে খোঁজ করলে এমন অনেক সংগঠন পাওয়া যাবে৷ এদের কেউ কেউ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ভুয়া কার্যালয় দেখিয়ে নিবন্ধনও নিয়ে নিয়েছে৷ ওয়ান ইলেভেনের সময় ফেরদৌস আহমদ কোরেশী পি ডিবি ও এন জি ওর মালিক কাজী ফারুক আহমদ ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন নামে সংগঠন গড়ে তুলেন ৷ দুটি দলই সেসময়ে ঘটা করে দলীয় সম্মেলন করেছে৷ওয়ান ইলেভেন চলে গেলে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে যায়৷ মানুষও তাদের ভুলে যায়৷ সম্প্রতি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তারা সরকার দলের নেতাদের ধর্না দিচ্ছে জোটে যেতে৷ ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর আপাতত কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছেনা৷ হয়তো তলে তলে কোন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত রয়েছে৷

এসব ছোট ছোট দলের ব্যাপারে একটা নীতিমালা থাকা উচিত নয় কি?সুবিধাবাদীরা এদের দিয়ে জোট করে দেশ ও বিশ্ববাসীকে দেখায় এত এত দল তাদের পক্ষে৷জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না চট্টগ্রামের সমাবেশে বলেন,
সরকার ঐক্যের পথে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আমরা অনেকগুলো দল এক হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই- সরকারের পতন। তারা হঠাৎ তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আমরা লড়াই করব এবং ভোটে জিতব। ভোটকেন্দ্রে, ভোটের মাঠে, রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকব। জয় আমাদের হবেই।

মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, সরকার বলছে ৭ দফা ১১ দফা মানবে না। আমরা বলছি, মানতে হবে। সরকার বলছে তারা পদত্যাগ করবে না, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না। আমরা বলছি, দিতে হবে। আমরা কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছি, আমাদের দাবি মানতে হবে।
। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বর্জনের কোন পক্ষে কয়টি দল তা নিয়েও কূটচাল খেলতে পারে মতলববাজেরা৷ নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে ২০০৬ সালের অক্টোবরের অনুরূপ ঘটনা ঘটানোর ইঙ্গিত বেশ জোরেসোরেই দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা৷বিএনপি কৌশলগত ভাবেই জাতীয় ঐক্যের ব্যানার ব্যবহার করছে৷ শোনা যাচ্ছে আরও অনেক ছোট ছোট দল ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার পায়তারা করছে যেমন তেমনই সরকার দলীয় জোটে মেশারও পায়তারা করছে৷ যে জোটে অধিক সুবিধা পাবে সে জোটেই মিশবে তারা৷

সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা ও হোস্টেলে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতকরন এবং সেখানকার গাছপালা কেটে ফেলা হয়৷ এ সময় বাঁধা দিতে গেলে তাদের বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। কিন্তু এব্যাপারে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করতে গেলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি পুলিশ৷ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের আহত শিক্ষার্থী লিমন জানান, সকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। পথে বহিরাগত লোকজনের ভিড় দেখেন। সেখানে তার সহপাঠীদের লাঞ্চিত হতে দেখেন। এ সময় প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে তার ডান হাত ভেঙ্গে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার অন্য সহপাঠীদেরও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে। এই ঘটনা কেন ঘটানো হল?পঙ্গু লিমনের হাত ভেঙ্গে ফেলে সরকারের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে একটি মহল?এর প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামের একটি জোট গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ৷ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাবলিক এসোসিয়েশন (পিএইচএ) ভবনে প্রবেশের রাস্তা দখল, ভবনে হামলা, ভাংচুর, নারী ছাত্রী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর সরকারদলীয় গুণ্ডাদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেছেন, দেশ আজ একদলীয় সন্ত্রাসী একনায়কতন্ত্রের অধীনে।

বিবৃতিতে সন্ত্রাসীদের হামলার সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়, এ হামলা সন্ত্রাসের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে৷ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ হামলার বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করেছে৷ এতে সংহতি জানিয়েছে যুক্তফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত সংগঠন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী৷

দেশের রাজনীতি ক্রমশ সংঘাতের দিকে যাচ্ছে৷জোটের বদলে পাল্টা জোট, দল বদল ও মত বদল চলছে৷ ২০ দল হতে বেরিয়ে গেছে ৩ টি দল৷ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারায় যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক। এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ছিলেন৷ গোলাম সারোয়ার মিলন ওয়ান ইলেভেনের সময় গঠিত হওয়া পি ডিবি’র নেতা ছিলেন৷ ২০ দলের ৩ দল ও নবাগতদের নিয়ে কি আবার যুক্তফ্রন্ট সক্রিয় হচ্ছে?এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকলো৷ সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮দফা দাবিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পরিবহন ধর্মঘটে অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধের গাড়ি, বিদেশ যাত্রী, পরীক্ষার্থীর যানবহনও চলতে দেয়নি পরিবহন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বাধায় মৌলভীবাজারের অ্যাম্বুলেন্সে আটকা পড়ে মারা গেছে সাত দিন বয়সী এক শিশু।নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে আগে কেন এই ধর্মঘট?

পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের প্রথমদিন রাজধানীতে বিভিন্ন প্রাইভেটকারের চালক এবং যাত্রীদের মুখে ও পরিধেয় বস্ত্রে পোড়া মবিল ও কালো কালি মাখিয়ে দিয়েছে ধর্মঘটীরা৷ এমনকি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি-রিকশাও চলতে দেয়া হয়নি। অনেক জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স চলতে পর্যন্ত বাধা দেয়া হয়েছে৷আরেকদিকে চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবীতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা৷ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও সরকারের কোটা নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে৷ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের কেও আন্দোলন মুখী করে দেয়া হল৷ যুক্তফ্রন্ট,জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট,২০ দল যদি নির্বাচন বর্জন করে ও দেশে নাশকতা চলমান থাকে এরকম পরিস্থিতি কি অগণতান্ত্রিক শক্তির আগমনের সহায়ক নয়?আন্তর্জাতিক পরিসরে এ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে ড.ইউনুস,এস,কে সিনহা৷ সম্প্রতি বিদেশ গেল নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার৷সরকার কর্তৃক গ্রেফতার ও হুমকি পাওয়া সারাদেশে একসময়ের আলোচিত গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার অনেক আগেই বিদেশ চলে গেছেন৷ সার্বিক পরিস্থিতিতে একাদশ সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হবে কি? দেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মত নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও সুযোগ নেই৷ সেক্ষেত্রে নির্বাচন বানচাল ও অগণতান্ত্রিক শক্তির আবির্ভাবকে কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায়না৷ একটা বিশেষ মহল কিন্তু তা-ই চাচ্ছে৷

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)