হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে উৎসাহ দিচ্ছেন ভারত ফেরত ১৬ সাংবাদিক
করোনার উদ্ভুত পরিস্থিতিতেও বিদেশ ফেরতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিমানবন্দরে অব্যবস্থাপনায় হতাশা প্রকাশ
ভারতে ‘ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটেক)’ শিক্ষা বৃত্তি কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ শেষে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক।
ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইটেক বৃত্তি প্রকল্পটি পরিচালিত হয়ে থাকে। এ কার্যক্রমের লক্ষ্যে তাদের বন্ধু প্রতীম দেশগুলোর পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়ন।
২৬ দিনের শিক্ষা বৃত্তি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শেষ গতকাল শনিবার তারা কলকাতা থেকে দেশে ফিরে আসে। তাদের এ বৃত্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার প্রসিদ্ধ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে। সেখানে তারা ডিজিটাল এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের উপর আয়োজিত বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন।
এরপর দেশে ফিরে বিমান বন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী যার যার বাসায় ফিরে কোয়ারেন্টাইনে চলে যান। নিজের বাসায় অবস্থান করেও পরিবার এবং দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের রুমে অবস্থান করছেন। এমনকি মুখোমুখি হচ্ছেন না পরিবারের মানুষদেরও। খাবারের সময় পরিবারের লোকেরা দরজার কাছে খাবার রেখে যাচ্ছেন, তারা চলে যাবার পর তার সে খাবার আবার নিজের রুমে নিয়ে খাচ্ছেন।
ফিরে আসার পর কোয়ারেন্টাইনে অভিজ্ঞতা নানা ভাবে তুলে ধরেছেন ভারত ফেরা সাংবাদিকেরা। ১৬ জনের প্রতিনিধি দলে থাকা চ্যনেল আইয়ের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট লায়লা নওশিন তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন: আমরা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইটেকে অংশ নিতে কলকাতা যায়। সেখানে ২৬ দিন অবস্থান করি। শুরুতে করোনা নিয়ে কলকাতার মানুষকে খুব একটা চিন্তিত না দেখা গেলেও শেষ ভাগে যখন পশ্চিমবঙ্গে একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগি সনাক্ত হলেন, তখন পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি কার্যক্রমের শেষ দিন সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানও সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়।
কেমন ছিলো বিমান বন্দরের অভিজ্ঞতা? জানতে চাইলে নওশিন বলেন: কলকাতা এয়ারপোর্টে তেমন কোন বিশেষ সতর্কতা চোখে পড়েনি। এমনকি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর না। শুধু আমাদের সকলের হাতে একটি করে কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেখানে আমাদের নাম ঠিকানাসহ জ্বর আছে কিনা, কাশি আছে কিনা এমন কিছু প্রশ্ন লেখা ছিলো৷
তিনি আরও বলেন : উত্তর গুলো পূরণ করে দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তারের কাছে জমা দিলে তিনি আমাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এ মর্মে একটি সিল লাগিয়ে দিলেন। যেটা প্রথমবার গোসলের পরই ধুঁয়ে গেছে।
করোনার উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধের শেষ দিন দেশে ফিরলেও কারও স্বাস্থ্য পরীক্ষা-থার্মাল স্ক্যান না করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বলেন: বিমানবন্দর থেকে বের হবার পর আমরা তিনজন একটা উবার কল করি। কিন্তু আমরা দেশের বাইরে থেকে আসছি জেনে, যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আরেকটি উবারে করে বাসায় ফিরি। কিন্তু আমরা যে দেশে ফিরে গাড়িতে উঠলাম আমাদের মধ্যে কেউ সংক্রমিত কিনা নিশ্চিত না। আমাদের থেকে তো ওই ড্রাইভারও আক্রান্ত হতে পারেন। এমন পরিস্তিতিতে বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরতদের বিষয়ে এমন উদাসীনতা আমাকে হতাশ করেছে।
বর্তমানে নওশীন নীলফামারীর জলডাকা উপজেলার নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
আইটেকে টেভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের কূটনৈতিক প্রতিবেদক আঙ্গুর নাহার মন্টির অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি পরে আর অংশ নেননি। তবে ১৬ সাংবাদিকের হোম কোয়ারান্টাইনে যার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ভারত ফেরত সবশেষ সাংবাদিক দলটির হাতে সিল নিয়ে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইন করার যে মানসিকতা দেখাচ্ছে তা অবশ্যই পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি তাদের দায়িত্বশীল আচরণ। সরকারের কাঁধে সব না চাপিয়ে সবাইকে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। সবার দায়িত্ব মনে করাতেই হয়তো ক্ষুদে অদৃশ্য দৈত্য কোভিড-১৯ এর আগমন। দোষারোপে মুক্তি মিলবে না কিছুতেই। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলেও হবে না। প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবেই। নিজের সাধ্যমতো অন্যের পাশেও দাঁড়াতেই হবে!
হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা সাংবাদিক দলটির আরেক সদস্য শামীমা দোলা তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তার ফেসবুক ওয়াল লিখেছেন: আজ থেকে শুরু হলো আমার ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন!! আমি আরো খুশি হতাম যদি বাসায় না থেকে অন্য জায়গায় থাকতে হতো!! আমার পরিবারের জন্যে ন্যুনতম আশংকা থাকতো না।
এবার আইটেক স্কলারশিপের মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কোর্সে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, গাম্বিয়া, নামিবিয়া ও ভিয়েতনামের ৩০ জন পেশাজীবী অংশ নিয়েছিলো।