বিএমডিসি আইন অনুযায়ী এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক Alternative Medical Care শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী সংযোজনের অনুমতি প্রদানকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিটের রুল খারিজ করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া ৭১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ হয়েছে। এই রায়ে বিকল্পধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা তাদের নামের পূর্বে ১) Integrated Physician ২) Complementary Physician ৩) Integrated Medicine Practitioner এবং ৪) Complementary Medicine Practitioner পদবী ব্যবহার করতে পারেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন হাইকোর্ট।
সংবিধান অনুযায়ী চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘একজন নাগরিক প্রচলিত অথবা পশ্চিমা কিংবা এ্যালোপ্যাথি নাকি বিকল্প চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া সম্পূর্ণ তাঁর মৌলিক অধিকার। এছাড়া সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন। সুতরাং পাঁচ হাজার বছর যাবত সমগ্র পৃথিবীতে চলে আসা প্রাচীন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির যথাযথ এবং সঠিক ভাবে পঠন এবং প্রশিক্ষণ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে। তাই বিকল্প ধারার কিংবা প্রচলিত চিকিৎসক হওয়ার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় আইনী কাঠামো প্রস্তুত করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।’
প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে পৃথক মন্ত্রণালয় তথা “Ministry of Ayush Government of India” এর আদলে বাংলাদেশের একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া বিকল্প ধারার চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সেবার মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করার পদ্ধতি নির্ধারণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এই রায়ে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, অ্যাডভোকেট খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন ও অ্যাডভোকেট মো. মজিবর রহমান। বিএমডিসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, অ্যাডভোকেট সাকিবুজ্জামান, অ্যাডভোকেট কাজী ইরশাদুল আলম, অ্যাডভোকেট ইমরান আনোয়ার। অপর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাপস কুমার বিশ্বাস। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন। এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা, সায়রা ফিরোজ ও মাহফুজুর রহমান লিখন।